মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটির রাখাইন রাজ্যের ছয়টি শহরে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মাঝে চলতে থাকা সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে রাজ্যটিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উপস্থিতিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খবর বার্মা নিউজ, দ্য ইরাবতিসহ মিয়ানমারের বেশ কিছু গণমাধ্যমের।
পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কর্মরত একটি সাহায্য সংস্থার কাছে পাঠানো একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুথিডাং, মংডু, রাথেডাং, ম্রাউক-উ, মিনবিয়া এবং মায়েবন শহরে প্রবেশাধিকার সামরিক জান্তা দ্বারা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
শাসক বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে গত মাস থেকে উত্তর রাখাইন রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্যের পালেতোয়া শহরে সংঘাত চলছে। জান্তা প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উল্লেখিত জনপদগুলোতে কোনো আন্দোলনের অনুমতি দেয়া হবে না। অন্যান্য শহরে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্য ব্যতীত অন্যান্য পণ্য বিতরণের অনুমতি দেয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থানীয় জনগণের জন্য বিশাল প্রভাব ফেলবে এবং কর্মীদের নিরাপত্তার উদ্বেগও রয়েছে।
আরাকান আর্মি গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা দেয়, নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা জল ও স্থলপথের সকল যানবাহন পরীক্ষা করে দেখবে। কারণ, জান্তা সরকার রাখাইনের বিভিন্ন শহরে তার বাহিনীকে বেসামরিক পরিবহন ব্যবহার করেও পুনরায় শক্তি বৃদ্ধিতে নানা পণ্য সরবরাহ করছে। আরাকান আর্মির এই ঘোষণার একদিন পরেই এলো জান্তার ঘোষণা। আরাকান আর্মির ঘোষণায় বলা হয়, সকল পরিবহনে তাদের পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, রাখাইন এবং পালেতোয়ায় ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষের মধ্যেও আরও ভারী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী আরাকান আর্মির কাছে দুটি ফাঁড়ি হারিয়েছে। যার মধ্যে একটির অবস্থান বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে মংডু শহরে। এরপর থেকে জান্তা সরকার উত্তর রাখাইন এবং চিন রাজ্যের পালেতোয়া শহরে বিমান ও কামান হামলা চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার জান্তা নিয়ন্ত্রিত অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন বিভাগ বোট কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি শহরে তাদের পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এই মাসের শুরুর দিকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, রাখাইন রাজ্যজুড়ে এবং পালেতোয়া শহরে লড়াই বৃদ্ধির ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট তৈরি হচ্ছে। রাখাইন ও পালেতোয়া শহরে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার ৬শ’ মানুষ নতুনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, রাখাইন ও পালেতোয়া জুড়ে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে অতীত এবং বর্তমান সংঘর্ষের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের মোট সংখ্যা প্রায় ৮৪ হাজারে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: ‘মিয়ানমার ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ, অন্যথায় জাতিসংঘে জানানো হবে’
/এম ই
Leave a reply