রোহিঙ্গারা তাদের দেশ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসছেন কেন? তারা আসছেন; কারণ নিজ দেশের সেনাবাহিনী তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিঃশেষ করে দিতে চায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা রাষ্ট্রীয় কিছু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। তাতে মারা যায় ১২ জন পুলিশ সদস্য। এই ছুঁতোয় রাখাইন রাজ্যজুড়ে নিধন অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযান। জাতিসংঘের তথ্য মতে, গত এক মাসে দুই শতাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গারা বাস করতেন যেসব এলাকায় তার প্রায় ৪০ শতাংশ এখন মানবশূন্য।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নিধন অভিযানের মুখে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর তথ্য এটি।
নিজ দেশের সেনাদের হাত থেকে পালিয়ে আসা এসব মানুষ এখন কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। শরণার্থীদের এই বিশাল বহরকে নিয়ন্ত্রণ, তাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, ত্রাণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ মাঠের যাবতীয় বিষয় তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করেছে।
এ যেন সেনাবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে এসে আবারও সেনাদের হাতেই পড়েছেন রোহিঙ্গারা! তবে দুই ক্ষেত্রে পুরোই বিপরীত অভিজ্ঞতা তাদের। নিজ দেশের সেনাদেরকে রাইফেল হাতে তেড়ে আসতে দেখেছেন। গুলি খেয়েছেন; স্বজনকে হারিয়েছেন। আর কক্সবাজারের ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করা সেনারা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের জন্য ত্রাণ প্যাকেট হাতে নিয়ে! উর্দি পরা জোয়ানদের এমন রূপ তাদের কাছে অকল্পনীয়।
গতকাল শনিবার শরণার্থী ক্যাম্পে সেনারা কাজ শুরুর পর অন্যদের মতো সন্তুষ্ট রোহিঙ্গারাও। রোববার কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে সেনাদের কাছ থেকে ত্রাণ নিতে আসা অনেকেই তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে যমুনা টেলিভিশন’কে। তাদের আশা, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ত্রাণ বিতরণে যেমন বিশৃঙ্খলা ছিল তা থাকবে না।
ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ’ সেনাসদস্য মাঠে নেমেছেন।
আইএসপিআর’র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ৮টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তিনটি ধাপে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সব উৎস থেকে ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ ও নির্দিষ্ট স্থানে গুদামজাত করছে। পরবর্তীতে ত্রাণ সামগ্রী প্যাকেট করে গুদাম থেকে বিভিন্ন বিতরণ স্থানে পরিবহন করা হচ্ছে। সর্বশেষে তালিকা অনুযায়ী সমভাবে দুর্গত রোহিঙ্গাদের মাঝে তা বিতরণ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কল্পে ও সেনাবাহিনীকে মাস্টারপ্ল্যান ও ডিজাইনসহ অন্যান্য পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্রুত এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হবে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ও রোহিঙ্গাদের মাঝে চিকিৎসা কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
/কিউএস
Leave a reply