ইউক্রেনে আগ্রাসনের সাত মাসের মাথায় দেশটির অধিকৃত চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে সামরিক অভিযান বন্ধে এখনও কোনো ঘোষণা দেননি তিনি। এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। তিনি আসলে কোথায় গিয়ে থামবেন- তা নিয়ে চলছে জল্পনা। এছাড়া সময়ের সাথে যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়েও ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ।
যেনো একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি, একই ঘটনাপ্রবাহ, একই কৌশল। ক্রাইমিয়ার মত ইউক্রেনের আরও চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আট বছরের ব্যবধানে দুই দফায় ইউক্রেনের মোট আয়তনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখলে নিলো মস্কো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের আর কোনো দেশের জোরপূর্বক এতো ভূখণ্ড দখলের ইতিহাস নেই।
কেবল সামরিক বা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারই নয়, দখলকৃত অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয়ায় অর্থনৈতিক দিক দিয়েও লাভের পাল্লা ভারী হলো মস্কোর। ইউক্রেনের মোট শস্য উৎপাদনের প্রায় ১৫ শতাংশ চলে যাবে রাশিয়ার হাতে। অবশ্য এ সংযুক্তি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে রুশ নাগরিকদের মাঝেও। পুতিনপন্থিরা অনেকেই এটিকে অসাধারণ অর্জন বলে মনে করছেন। পুতিন সরকারের এমন পদক্ষেপকে পুরোপুরি সমর্থনও করছেন তারা।
তবে আছে ভিন্নমতও। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক রুশ নাগরিক। এর আগে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে থাকা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যে এ পর্যায়ে এসে তিক্ততায় রূপ নিয়েছে তাতে চিন্তিত অনেক রাশিয়ানই। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া; এবার- লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া, খেরসন। তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কোথায় থামবেন প্রেসিডেন্ট পুতিন?
এদিকে, সম্প্রতি নিজেদের রক্ষায় প্রয়োজনে যেকোনো কিছু করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এরপর থেকেই আলোচনার তুঙ্গে পরমাণু অস্ত্র ইস্যু। অনেকেরই ধারণা, চারটি অঞ্চল দখলের পর সার্বভৌমত্ব রক্ষার অজুহাতে মারণাস্ত্রের ব্যবহার করতে পারেন আগ্রাসী পুতিন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রতিরক্ষার নামে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনর্গঠনই পুতিনের উদ্দেশ্য। এর অংশ হিসেবেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এমন আগ্রাসী তিনি। আর এখন অধিকৃত অঞ্চলগুলো যেহেতু নিজেদের ভূখণ্ডেরই অংশ; সার্বভৌমত্ব রক্ষার অজুহাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগও তৈরি হলো পুতিনের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সদ্য অধিকৃত এসব অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা রাশিয়ার সাথে যুক্ত হলো যা ইউক্রেনের মোট আয়তনের ১৫ শতাংশ। ইউক্রেনের কৃষি উৎপাদন কমে যাবে ১৫ শতাংশের মতো। ক্রাইমিয়া ও নতুন ৪ এলাকা মিলে ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের ২০ শতাংশই রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলো।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে জন্ম নেয় রাশিয়ান ফেডারেশনসহ ১৫টি রাষ্ট্র। যা বদলে দেয় এশিয়া ও ইউরোপের মানচিত্র। এ ভাঙন নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন তৎকালীন গোয়েন্দা কর্মকর্তা পুতিন। কোনো রাখঢাক না রেখে বরাবরই জানান দিয়েছেন সে ক্ষোভের কথা।
/এসএইচ
Leave a reply