গেল কয়েক মাস ধরে বাড়ছে ঋণ প্রবাহ। কিন্তু তার সাথে সঙ্গতি নেই আমানতের। ফলে ব্যাংকিং খাতে তহবিল ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। আমানত না বাড়লে নতুন কার্যক্রম থমকে যেতে পারে বলেও মনে তারা। যদিও ব্যাংকাররা বলছেন, তারল্যের কিছুটা চাপ আছে। তবে সংকট তৈরি হবার শঙ্কা নেই।
করোনা সংকট নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই বেসরকারি খাতে চাহিদা বাড়ে নগদ অর্থের। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা আরও তরান্বিত হয়। সেই সাথে বাড়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ। কিন্তু বাড়ছে না আমানতের পরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে ব্যাংকে আমানত এসেছে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। আগে বছর যা ছিল প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ঋণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। আগের বছরের চেয়ে গত অর্থবছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ-আমানতের ভারসাম্যহীনতায় বিরুপ প্রভাব পড়বে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানত বৃদ্ধি না হওয়াটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। এর মূল কারণ নয়-ছয়ের ব্যাপার। পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ পার্সেন্টের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। সেটা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করার জন্য নয়-ছয়ের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে একটু সাবধানী হতে হবে।
বিআইবিএম’র সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ডিপোজিট যদি আনুপাতিক হারে না বাড়ে, তবে ব্যাংকগুলোর করণীয় হচ্ছে কল মার্কেট বড় করা; নয়তো রেপো মার্কেট বড় করতে হবে। আর রেপো মার্কেট বড় করলে ঋণের ব্যয় বেড়ে যাবে। তখন কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ায় উৎসাহিত হবে না।
ব্যাংকাররা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়া কিছুটা চাপে আছে ব্যাংকিং খাত। তবে তহবিল ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো সংকট হবে না। বেসরকারি খাতে ঋণের একটি বড় অংশ প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থও বলেও জানান তারা। এসবিএসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনি বললেন যে, ক্রেডিট বাড়ছে। তবে এর একটি অংশ কিন্তু প্রণোদনার টাকা। কিংবা রিফাইনান্সের (পুনঃঅর্থায়ন) টাকা। যতটুকু তারল্যের সংকট অনুভূত হওয়ার কথা ছিল, ততটুকু কিন্তু হচ্ছে না। মনে করছি, মার্কেট সচল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আরও প্রণোদনা এবং রিফাইনান্সের প্রকল্প আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও বলছে, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের টান পড়লে সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। উৎপাদনশীল খাতের বাইরে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- এমনটি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে প্রচুর অর্থ থাকার কারণে রিজার্ভও যথেষ্ট আছে। আমাদের এই সকল চিন্তাভাবনা আছে। যদি ডিপোজিট কিছু কমেও যায়, তবে সেটি সামাল দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করে ক্রেডিট গ্রোথ এবং প্রাইভেট গ্রোথকে ঠিক রাখার পরিকল্পনা আছে।
আরও পড়ুন: জনশুমারির তথ্য যাচাই করবে বিআইডিএস
/এম ই
Leave a reply