ক্লিক কেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োঅর্থোগোনাল কেমিস্ট্রির উন্নতি সাধনে বিশেষ অবদান রাখায় ক্যারোলিন রুথ বারতোজি এবং মর্টেন পি. মেল্ডালের সঙ্গে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার-২০২২ জয় করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস রিসার্সের গবেষক কার্ল ব্যারি শার্পলেস। আর এর মধ্য দিয়েই জন বারডিন, মেরি কুরি, লিনাস পাউলিং এবং ফ্রেডরিক স্যাঙ্গারের সাথে এক এলিট ক্লাবে ঢুকে গেলেন শার্পলেস। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বলে বিবেচিত নোবেল পুরস্কার দুইবার করে জয় করেছেন এই পাঁচজন ব্যক্তি।
বুধবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নোবেল কমিটি কর্তৃক ২০২২ সালের বিজয়ী হিসেবে কার্ল ব্যারি শার্পলেসের নাম ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়বার নোবেল পুরস্কার জেতা পঞ্চম ব্যক্তি হন যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস রিসার্চের এই গবেষক। কার্ল ব্যারি শার্পলেস এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রসায়নে নোবেল পুরস্কার জয় করলেন। ২০০১ সালে ‘কাইরালি ক্যাটালাইজড অক্সিডেশন রিয়্যাকশন’ নিয়ে কাজ করে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।
ব্যারি শার্পলেস ক্লিক রসায়নের ওপর কাজ শুরু করেছিলেন ২০০০ সালে। সে সময় ক্লিক কেমিস্ট্রির ভিত্তি স্থাপন করেন তিনি। এটি রসায়নের এমন এক ধরন, যেখানে আণবিক ব্লকগুলো দ্রুত ও দক্ষতার সাথে একত্রিত হয়। সেই সাথে, অবাঞ্ছিত উপজাতগুলোকেও সহজে এড়ানো যায়।
এবার দেখে নেয়া যাক মানব ইতিহাসের এমন চারজন চমৎকার প্রতিনিধির সাথে, যারা নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন দুইবার করে।
১। জন বারডিন
রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেট- আমাদের বর্তমান জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুসঙ্গ। আর এসব যারা ব্যবহার করেন তাদের সকলেরই জন বারডিনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের কৃতিত্ব প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট করা জন বারডিনের। হেডফোন থেকে শুরু করে টেলিভিশন পর্যন্ত অসংখ্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ভ্যাকুয়াম টিউব প্রতিস্থাপন করেছিল ট্রানজিস্টর।
ট্রানজিস্টর আবিষ্কার করে ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো নোবেল পুরস্কার জয় করেন বারডিন। এরপর ১৯৭২ সালে পদার্থবিজ্ঞানেই আবারও নোবেল পান তিনি। থিওরি অব কনভেনশনাল সুপারকন্ডাকটিভিটি (বিসিএস থিওরি নামে পরিচিত) প্রদান করে লিওন কুপার এবং জন রবার্ট শ্রাইফারের সঙ্গে নোবেল জেতেন বারডিন।
২। মেরি কুরি
ইতিহাসে প্রথমবারের দুইবার নোবেল পুরস্কাত জেতেন পোলিশ বিজ্ঞানী মেরি কুরি। তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কার করে ১৯০৩ সালে প্রথমবার স্বামী পিয়েরে কুরি এবং হেনরি বেকেরেলের সঙ্গে নোবেল জেতেন মেরি কুরি।
এরপর, রেডিয়াম এবং পোলোনিয়ামের উপাদান আবিষ্কার এবং এই কাজে নিজেদের সকল সম্পত্তি বিনিয়োগ করার জন্য পিয়েরে এবং মেরি কুরিকে ১৯১১ সালে আবারও রসায়নে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। তবে ১৯০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন পিয়েরে, এবং নোবেল পুরস্কারটি মরণোত্তর প্রদান করা হয় না বলে ১৯১১ সালে শুধুমাত্র মেরি কুরিকেই নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
৩। লিনাস পাউলিং
কারও সঙ্গে ভাগাভাগি না করে দুই দুইবার নোবেল পুরস্কার জয়ের একমাত্র কৃতিত্বটি আমেরিকান রসায়নবিদ লিনাস পাউলিংয়ের। রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য ১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মতো রসায়নে নোবেল পান লিনাস পাউলিং।
৮ বছর পর, স্নায়ুযুদ্ধের সময় পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে পাউলিংয়ের গৃহীত সামরিক শান্তিবাদ নীতি তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়।
৪। ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার
ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার ছিলেন একজন জৈব রসায়নবিদ, যিনি সফলভাবে প্রোটিন মধ্যস্থ অ্যামিনো অ্যাসিডের সিকোয়েন্স নির্ধারণ করেছিলেন। গ্লুকোজের বিপাক নিয়ন্ত্রণের মূল হরমোন হিসেবে ইনসুলিনকে সফলভাবে বেছে নিয়েছিলেন স্যাঙ্গার। এর কৃতিত্বস্বরূপ ১৯৫৮ সালে রসায়নে তার প্রথম নোবেল পুরস্কার জেতেন ইংলিশ এই বিজ্ঞানী।
ইনসুলিনের কেমিক্যাল চেইনকে বিষদভাবে বর্ণনা করেন স্যাঙ্গার। এর মাধ্যমেই ১৯৬৩ সালে গবেষণাগারে প্রথমবারের মতো সিনথেটিক প্রোটিন তৈরি করা সম্ভব হয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের উচিত স্যাঙ্গারের বিজ্ঞান সাধনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
১৯৮০ সালে ডিএনএ অধ্যয়নের রীতি আবিষ্কার করে আবারও রসায়নে নোবেল পুরস্কার জেতেন ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার। মানব জিনোমের প্রকৃতি খুঁজে বের করার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় স্যাঙ্গারের এই আবিষ্কারকে।
আরও পড়ুন: বারতোজি, মেল্ডাল ও শার্পলেসের রসায়নে নোবেল জয়
/এম ই
Leave a reply