গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানে শুরু হয় বিক্ষোভ। অভিযোগ, হিজাব ইস্যুতে পুলিশ হেফাজতে ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু। দিন দিন সেই বিক্ষোভ রূপ নেয় সহিংসতায়। চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে মৃত্যু হয় শতাধিক ইরানির। এবার ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদে শামিল হলো ফ্রান্সও। প্রায় অর্ধশত অভিনেত্রী ও গায়িকা চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছে ইরানে চলমান সহিংসতার।
বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। নারীর স্বাধীনতার দাবিতে চলা সেই বিক্ষোভের ঢেউ লেগেছে দেশে দেশে। ইরানে পুলিশ হেফাজতে কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফ্রান্সের অর্ধশত অভিনেত্রী ও গায়িকা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- অস্কারজয়ী অভিনেত্রী মারিয়ন কঁতিয়া, জুলিয়েট বিনোশ, ইজাবেল উপের, বেরেনিস বেজো, শার্লোট গেইন্সবুর্গ ও ইজাবেল আজানির মতো বিশ্বখ্যাত তারকা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেসব দৃশ্য। ইনস্টাগ্রামে ইরানি নারীদের সমর্থনে খোলা অ্যাকাউন্ট থেকে ‘হেয়ার ফর ফ্রিডম’ হ্যাশট্যাগসহ শেয়ার করা একটি ভিডিও সংকলনে ফরাসি তারকাদের প্রতিবাদ দেখা গেছে। নেপথ্যে ইতালীয় প্রতিবাদী গান ‘বেলা চাও’-এর ফার্সি সংস্করণও জুড়ে দেয়া হয়েছে। চুল কেটে ইরানি নারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন তারা।
ভিডিওর শুরুতে নিজের মাথার এক গোছা চুল কেটে ক্যামেরার সামনে ধরে অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য।’ সেই সাথে ফরাসি চলচ্চিত্র জগতের হাজারও কলাকুশলী ইরানিদের বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- স্বর্ণ পামজয়ী পরিচালক জুলিয়া দুকুরনো, জ্যাক অঁদিয়ার, কান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো, অভিনেত্রী লেয়া সেঁদু, ভার্জিনি এফিরা, মেলানি লহোঁ প্রমুখ।
এর আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের কঠোর পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে আটক করা হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ যদিও বলছে, হার্ট অ্যাটাক। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় ইরান জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাজপথে নামা আন্দোলনকারীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে লন্ডন, প্যারিস, রোম, মাদ্রিদসহ বিভিন্ন দেশের সচেতন নাগরিকরা। এবার নাড়া লাগলো ফরাসি তারকাদের মনে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সুইডিশ সদস্য আবির আল-সাহলানিও চুল কাটার বিষয়টি সমর্থন করেছেন। তার চোখে, ইরানি নারীরা আন্তর্জাতিক সমর্থন আশা করেন। সম্প্রতি ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে অবস্থিত পার্লামেন্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদানকালে নিজের চুল কেটে সংহতি প্রদর্শন করেন তিনি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য আবির আল-সাহলানি বলেন, শুধু অভিনেত্রীরাই নয়, আশা করি বিশ্বের সবাই এমন পথ অনুসরণ করবে। পুরুষরাও তাদের চুল ফেলে দিতে পারে। আমি মনে করি সামনে এটাও ঘটবে।
মাহসা আমিনির মৃত্যু সাড়া জাগিয়েছে সমগ্র বিশ্বে। হাজারো নারী নেমেছেন রাজপথে। নিজেদের চুল কেটে ফেলছেন, হিজাব পোড়াচ্ছেন। ফরাসি তারকাদের এমন অভিনব প্রতিবাদের হাওয়া কি এবার লাগবে বিশ্বে সবচেয়ে বড় সিনে ইন্ডাস্ট্রি হলিউডেও? তা তো সময়ই বলে দেবে।
/এসএইচ
Leave a reply