সুলতানা কামাল-মুনতাসির মামুনের বিরুদ্ধে রিজভীর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ, ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

|

বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ও অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর রাষ্ট্রদ্রোহমূলক, ভিত্তিহীন ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ দেড় শতাধিক বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী। সুলতানা কামাল ও মুনতাসির মামুনের বিরুদ্ধে দেয়া বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করাসহ রিজভীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে দেয়া ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ক্ষোভ জানান দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ দেড় শতাধিক বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী।

এর আগে, গত ৫ই অক্টোবর এক বিক্ষোভ সমাবেশে সুলতানা কামাল ও অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের বিরুদ্ধে রিজভী বলেন, আপনারা অনেক আগেই এদেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করেছেন। আপনারা কারো ক্রীতদাস হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন।

সম্প্রতি, ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘জোরপূর্বক গুম’ এর বিষয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুলতানা কামাল।

সেখানে তিনি বলেন, মানবাধিকারের বিষয়ে বিএনপির মিথ্যার ইতিহাস রয়েছে। এবং এই দলটির বিরুদ্ধে ‘আইনি ব্যবস্থা নেয়ার’ আহ্বান জানান তিনি। এরপরই, বিএনপির পক্ষ থেকে আক্রমণের খড়গ নেমে আসে সুলতানা কামালসহ শীর্ষ লেখক, গবেষকদের ওপর।

এদিকে, বিএনপির এমন আচরণে ফুঁসে উঠেছেন বুদ্ধিজীবীরা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ান বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রুহুল কবির রিজভী নিজের আপত্তিকর বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ না দিয়ে তাদেরকে ‘আওয়ামী লীগের কট্টর গুণ্ডা’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন, যা ভিত্তিহীন বলে মনে করে ওয়ান বাংলাদেশ।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের এই দুই স্বনামধন্য ব্যক্তি বিএনপি’র তৈরি মিথ্যা, বানোয়াট ও অস্তিত্বহীন মানবাধিকার ইস্যুতে সমস্বরে কথা না বলার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথাবার্তা বলা হচ্ছে। যা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ বলে আমরা মনে করি। তাই সুলতানা কামাল ও মুনতাসির মামুনের বিরুদ্ধে রিজভীর আপত্তিকর বক্তব্য অতি দ্রুত প্রত্যাহার করা এবং রিজভীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

ওয়ান বাংলাদেশের বিবৃতিতে বলা হয়, সুলতানা কামালকে এ ধরনের কুৎসার ভাষায় আক্রমণ করা অযৌক্তিক, বিবেক বিবর্জিত ও শিষ্ঠাচার বহির্ভূত। এ ধরনের বক্তব্যে রিজভীর নিজের অজ্ঞানতা এবং প্রকৃতপক্ষে বিএনপির অসহিষ্ণু মানসিকতারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলে মানবাধিকার কর্মীদের ওপর হামলার অসংখ্য ঘটনার দৃষ্টান্ত তুলে ধরাকে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করে ওয়ান বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষকবৃন্দ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিএনপি ও চরমপন্থীদের মধ্যে একটি অপবিত্র আঁতাতের কথা মনে করিয়ে দেবে। ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাইয়ের উত্থান, হুমায়ূন আজাদের মতো উদারপন্থী লেখকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা অগণিত সহিংস হামলা ও গণহত্যা সংগঠিত করা এবং স্বাধীনতার পর বিএনপির সঙ্গে জামোয়াতের জোটবদ্ধ সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার ন্যাক্কারজনক কৌশলগুলোর কথাও বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে সংঘটিত সহিংসতাকেও উপেক্ষা করতে পারেন না। যখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে উগ্রপন্থীদের দ্বারা নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি কূটনীতিকদেরও রেহাই দেয়া হয়নি। বিএনপি শাসনামলে লেখকদের নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করা হয়েছিল। উগ্র মৌলবাদী জামায়াত ইসলামী সরকারের অংশ হয়ে ওঠে। এমনকি দেশটির প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান যিনি আইনি শাস্তি এড়াতে লন্ডনে থেকে পলাতক জীবন-যাপন করছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীদের নিয়ে সংগঠন ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন উপ-উপাচার্য ছাড়াও অন্যান্য পেশার নেতৃস্থানীয়রা রয়েছেন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply