কিশোর কুমারের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

|

কিশোর কুমার (১৯২৯-১৯৮৭)

ওয়ার্ডেন রোডে তার ফ্ল্যাটের বাইরে বোর্ড ঝোলানো থাকতো ‘‌কিশোর কুমারের থেকে সাবধান’‌। আর এই বাণীকে সত্য প্রমাণিত করতে এক প্রযোজকের হাত কামড়ে দিয়েছিলেন তিনি।  ইনিই কিশোর কুমার, বাংলা সঙ্গীত ও সিনে ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে রসিক, রঙ্গীন আর গুণী মানুষ। যার কণ্ঠে ছিলো অসাধারন এক জাদু। তার গায়কীর এক নিজস্ব ভঙ্গী তৈরী করে তিনি হয়ে ওঠেন কিংবদন্তী। আজ এই কিংবদন্তীর মৃত্যুবার্ষিকী।

‘ওপারে থাকবো আমি তুমি রইবে এপারে, শুধু আমার দু’চোখ ভরে দেখব তোমারে’, ‘আশা ছিল ভালোবাসাও ছিল’, মনে হতো সে যেনো আমার পাশে আজও বসে আছে তবে আজ আশা নেই ভালোবাসা নেই’। শিল্পীর এমন সব গানের কথা আজও গেঁথে আছে হাজারও সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মনে।

কিশোর কুমার মানেই সুরের জাদু। সারা জীবন তিনি মাতিয়ে রেখেছেন তার গানের কথা দিয়ে। তবে আজ যে কিশোর কুমারের সুরেলা কন্ঠের জাদুতে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব, তার গলা মোটেও এতো সুরেলা ছিল না।

কিশোর কুমারের মৃত্যুর পর এক সাক্ষাতকারে তার ভাই অশোক কুমার বলেন, কিশোরের গলা ছিল খুবই কর্কশ ও মোটা। যখন কথা বলতো প্রতি কথায় একটা করে কাশি দিয়ে কথা শেষ করতো। কিন্তু চোখে গায়ক হওয়ার স্বপ্ন ছিলো তখন থেকেই।

ব্রিটিশ ভারতের সেন্ট্রাল প্রভিন্স বা আজকের মধ্যপ্রদেশের খন্ডোয়া অঞ্চলে ১৯২৯ সালের ৪ অগাস্ট মধ্যপ্রদেশের এক বাঙালি পরিবারে জন্ম কিশোর কুমারের। তার আসল নাম ছিলো আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়।     

আভাস যখন ছোট তখন তার বড় ভাই অশোক কুমার হিন্দি সিনেমার প্রতিষ্ঠিত তারকা। তাই তার ভাই চাইতেন আভাসও সিনেমায় তার ক্যারিয়ার শুরু করুক। কিন্তু তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন বম্বে টকিজের কোরাস শিল্পী হিসেবে। আর বিনোদন দুনিয়ায় পা রেখে ভাইয়ের মতো নিজের নামটিও বদলে ফেললেন তিনি। আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হইয়ে উঠলেন কিশোর কুমার।

কিশোর কুমারের জীবনের সঙ্গে ৪ সংখ্যাটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তার জন্মদিন ৪ অগাস্ট। তিনি চার ভাই-বোনের সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন, অর্থাৎ ৪র্থ সন্তান। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন চারবার। এমনকী চলচ্চিত্র জীবনে ঠিক চারটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন।

১৯৪৮ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা ‘জিদ্দি’তে প্রথম প্লেব্যাক করেন কিশোর। তবে শুধু গানেই নয়, ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত বেশিকিছু সিনেমায় অভিনয়ও করেন কিংবদন্তি এ তারকা। পরে তিনি অভিনয় ছেড়ে আবারো মনোযোগ দেন গানে। শুধু পুরুষ কণ্ঠেই নয়, কিশোর কুমার নারী কণ্ঠেও গান গেয়েছেন। ‘আকে সিধি লগি দিল পে’ গানটির মহিলা কণ্ঠে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কিশোর কুমারই গেয়েছিলেন।

ভারতবর্ষে পুরুষ প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতার রেকর্ড আছে তার। মোট আটবার এ পুরস্কার জেতেন কিশোর। ১৯৮৭ সালে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সকলের প্রিয় কিশোর কুমার। তবে তিনি আজও সিনেপ্রেমীদের কাছে একইভাবে সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। তার অনন্য সৃষ্টির মাধ্যমে আজও তিনি বেঁচে আছেন আট থেকে আশি, সকলের হৃদয়ের মনিকোঠায়।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply