ছয় বছরে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী দেখার পথে ব্রিটেন! এবার, কে বসতে যাচ্ছেন সেই মিউজিক্যাল চেয়ারে? অনেকেই বলছেন, অবশেষে এবার ভাগ্যের শিকে ছিড়বে ভারতীয় বংশোদ্ভুত ঋষি সুনাকের। দেড় মাসের আগেও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ঋষি। তবে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লড়াইয়ে নামলে বদলে যেতে পারে দৃশ্যপট। যদিও বিরোধী দলগুলো বলছে, নেতা নির্বাচনের এ প্রক্রিয়া এখন অর্থহীন। আগাম সাধারণ নির্বাচনের দাবি তাদের।
মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে, তৃতীয় দফা পরিবর্তন আসছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে। ব্রেক্সিট ইস্যুতে ২০১৭ সালে যে অস্থিরতার শুরু দেশটির রাজনীতিতে; তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায়। ফলাফল, মাত্র ৪৫ দিনেই বিদায় নিলেন লিজ ট্রাস। আর এ কারণেই, ছয় বছরে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রীর খোঁজে যুক্তরাজ্য।
মাত্র দেড় মাস আগেই দীর্ঘ নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করেছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। যাতে লিজ ট্রাসের কাছে হেরেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত ঋষি সুনাক। ট্রাসের বিদায়ের পর স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার শীর্ষে তিনি। তবে, বাজিকরদের পছন্দের তালিকায় আছেন পেনি মরডন্টও। আর, চমক দেখাতে পারেন দেড় মাস আগে বিদায় নেয়া প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাসের পদত্যাগের খবর শুনে ক্যারিবিয়ার অবকাশ থেকে তড়িঘড়ি দেশে ফিরছেন বরিস। তবে, যিনিই নির্বাচিত হোন, দলের বিভেদ দূর না হলে, সংকটের সমাধান হবে না বলে সতর্ক করছেন দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
চ্যাথাম হাউসের রিসার্চ ফেলো ডেভিড লরেন্স বলেন, যেকোনো এক প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে তৈরি নয় কনজারভেটিভ পার্টি- এটাই তাদের মূল সমস্যা। মাত্র দেড় মাস আগেও, ট্রাস ও সুনাকের সমর্থকরা কাদা ছোড়াছুড়ি করেছেন। সুতরাং, ঋষি সুনাক ক্ষমতায় এসেই দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন- এমন ভাবাটা কষ্টকর। বরিস জনসনের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি খাটে। তবে, দলীয় সদস্যদের কাছে তিনি তুলনামূলক বেশি জনপ্রিয়।
এ প্রসঙ্গে চেইঞ্জিং ইউরোপের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জিল রাটার বলেন, রক্ষণশীলরা নিজেরাই দ্বিধাবিভক্ত। এ পরিস্থিতিতে, দলীয় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা তাদের জন্য কঠিন। তবে, নিজেকে লম্বা রেসের ঘোড়া প্রমাণ করেছেন ঋষি সুনাক। নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং কার্যকারিতা নিয়ে এর আগে তিনিই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তালিকায় এসেছে পেনি মরডান্ট, জেরেমি হান্ট ও বেন ওয়ালেসের নামও। তবে, সবাইকে ছাপিয়ে আবারও আলোচনায় বরিস জনসন।
অবশ্য, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলো বলছে, বারবার নেতা পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছে কনজারভেটিভরা। দলের অভ্যন্তরে নয়, বরং আগাম সাধারণ নির্বাচনের দাবি তাদের।
এ ব্যাপারে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন বলেন, দলীয় ভোটাভুটি বাদ দিয়ে, যুক্তরাজ্যে আগাম সাধারণ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এটা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন- সে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব ব্রিটিশদের ওপরই ছাড়া উচিৎ। কেননা, কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষতটা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে গেছেন লিজ ট্রাস।
প্রসঙ্গত, স্বাভাবিক হিসেব অনুযায়ী; ২০২৫ সালে ব্রিটেনে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যে অস্থিরতা, তাতে আগাম নির্বাচনকে অনেকটা অবশ্যম্ভাবী মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে, দেশটির সরকারপ্রধান চাইলে, এককভাবেই নিতে পারেন সে সিদ্ধান্ত।
/এসএইচ
Leave a reply