জার্মানির নির্বাচনের জিতেছে মার্কেলের ইউনিয়ন জোট। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) নামের দলটি। মাত্র ৪ বছর আগে যাদের আত্মপ্রকাশ তারাই কিনা এবারের নির্বাচনে জার্মান সংসদে ৯০টিরও বেশি আসন জিতেছে!
বিশ্লেষকদের অনুমান ছিলো, নতুন হলেও নির্বাচনে ১০ শতাংশের মতো ভোট পেতে পারে কট্টর ডানপন্থি দলটি। তবে, চূড়ান্ত ফলাফলে ধারণার চেয়েও ভালো করেছে তারা। ভোট পেয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী জার্মান সংসদে তাদের আসন সংখ্যা হবে ৯৪। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে কেন্দ্রীয় সংসদে জায়গা নিচ্ছে এএফডি।
কট্টরপন্থী এএফডি বিশ্বাস করে, জার্মান সমাজে মুসলিমদের কোনো জায়গা নেই। নির্বাচনী ইশতেহারে দলটি সরাসরি বলে, জিতলে তারা জার্মানির মসজিদগুলোতে বিদেশি অর্থায়ন নিষিদ্ধ করবে। একইসাথে বোরকা এবং আজান নিষিদ্ধেরও প্রতিশ্রুতি ছিল এএফডি’র ইশতেহারে। জার্মান ভোটারদের একটা বড় অংশের যে একই দৃষ্টিভঙ্গি, নির্বাচনে এএফডি’র সাফল্যই তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
আঞ্চলিক সংসদে প্রতিনিধিত্বের দিক থেকেও ভালো অবস্থানে আছে এএফডি। জার্মানির ১৬টি রাজ্যের ১৩টিতেই রয়েছে তাদের এমপি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর জার্মানিতে কোনো নতুন দল এই মাত্রার জনপ্রিয়তা পায়নি।
এএফডির উত্থানের গল্প
এএফডি’র আত্মপ্রকাশ ঘটে জার্মানির মুদ্রানীতির বিরোধিতা করে। ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রা ‘ইউরো’ বাতিলের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ধারায় ২০১৩ সালে এএফডির জন্ম। তাদের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে অভিবাসন ও ইসলাম বিরোধিতা। মসজিদের মিনারের বিরুদ্ধেও আপত্তি তোলে তারা। দলটির নেতারা বলেন, জার্মান সমাজের সাথে ইসলামি সংস্কৃতি ও জীবনধারার সহাবস্থান অসম্ভব।
২০১৫ সালে জার্মানিতে সিরিয়া ও কয়েকটি মুসলিম দেশের প্রায় ১০ লাখ মানুষকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া নিয়ে সৃষ্ট জনরোষ কাজে লাগায় এএফডি। অভিবাসীদের জার্মানি থেকে বের করে দিতে মার্কেল সরকারের ওপর চাপ দিতে থাকে দলটি।
ইউরোপের দেশে দেশে বিভিন্ন জাতিধর্মের লোকজনকে নাগরিকত্ব এবং বসবাসের অধিকার দেওয়ার যে নীতি রয়েছে, সেটিকে ‘অকার্যকর’ অভিহিত করে এএফডি। জার্মানিতে বসবাসরত প্রায় ৩০ লাখ তুর্কি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী এএফডির আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যতে পরিণত হয়।
আন্তর্জাতিক ঘটনা বিষয়ক কলাম লেখক ও সিএনএনের প্রাক্তন প্রযোজক, প্রতিবেদক ফ্রিদা ঘিতিস লিখেছেন, ‘আমরা স্থিতিশীল জার্মানিকে বিদায় জানাতে পারি (উই ক্যান সে’ গুডবাই টু অ্যা স্ট্যাবল জার্মানি)।’
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমা গ্যাব্রিয়েল ভোটারদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, এএফডি’কে সমর্থন করা মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিদের ফের সংসদে বসার ব্যবস্থা করে দেয়া।
এএফডি’র এমন উত্থান যে বড় অংশের জার্মানদের কট্টর মনোভাবের নির্দেশক সে বিষয়ে সম্ভবত কেউ দ্বিমত করবেন না।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply