ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন, কারা, কীভাবে করে থাকেন?

|

ছবি: সংগৃহীত।

বর্তমানে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। আগে বিশ্বের অন্য অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেয়া না হলেও যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো।

কেন নামকরণ?
এক সময় ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো।

নামবিহীন থাকলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে দ্রুত তথ্য জানা যায় না। এর আঘাত হানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ।

যেভাবে নামকরণ করা হতো:
গত কয়েক শতাব্দী ধরে আটলান্টিক ঝড়ের নাম দেয়া হয়ে আসছে, যেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বলবৎ থাকে। এরপরে আবহাওয়াবিদরা মিলে মেয়েদের নামে ঝড়গুলোর নামকরণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া সেবা অফিস আনুষ্ঠানিকভাবে Q, U, X, Y, Z ব্যতীত A থেকে W পর্যন্ত আদ্যক্ষরে মেয়েদের নামে ঝড়ের নামকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ নিয়ে ৬০ এবং ৭০ এর দশকে নারীদের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে ১৯৭৮ সালে ছেলেদের নামেও ঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বছরের প্রথম ঝড়ের নাম রাখা হত A আদ্যক্ষর দিয়ে, দ্বিতীয় ঝড়ের নাম রাখা হত B আদ্যক্ষর দিয়ে; এভাবে চলতে থাকতো। আবার জোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর (ধরা যাক, ২০২২ সালের ৩য় ঝড়) নাম রাখা হত ছেলেদের নামে আর বিজোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর নাম রাখা হত মেয়েদের নামে।

এ অঞ্চলের ঝড়ের নামকরণ যেভাবে হয়:
সাইক্লোনের ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে ওয়াল্ড মেটোরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু অঞ্চল ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সেই অঞ্চলের দেশগুলো মিটিংয়ের মাধ্যমে ঝড়গুলোর নাম ঠিক করে থাকে।
আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে। আরএসএমসি তার সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়ে থাকে। তালিকা পেলে দীর্ঘ সময় যাচাইবাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠায়।
এই অঞ্চলে আরএসএমসির সদস্য রয়েছে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ। বাকি ১২টি দেশ হলো ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।

২০০৪ সালে বাংলাদেশের দেয়া ‘অনিল’ নামে প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতে আঘাত করেছিল। বাংলাদেশে আঘাত হানা নামকরণ হওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ‘সিডর’। এটি ছিল ওমানের দেয়া নাম।

এদিকে, আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড। এই ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের আনুষ্ঠানিক নামকরণের দায়িত্ব ছিল দেশটি। ভিয়েতনামিজ ভাষায় সিত্রাং এর অর্থ ‘পাতা’।

কীভাবে নামকরণ করা হয়?
২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। সে সময় আটটি দেশ মিলে মোট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। এদিকে এই নামগুলো থেকে নামকরণ করা শেষ হলে আবারও নতুন করে নামের প্রস্তাব করা হয়। যা অনুমোদন দেয় ডব্লিউএমও।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বৈঠকে এক বা একাধিক জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া কর্মকর্তা অংশ নিয়ে থাকেন। আগে থেকে তারা আলোচনা করে নেন, কি নাম হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সেই তালিকা থেকে ঝড়ের নাম বাছাই করা হয়।

ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিকভাবে কোনোরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, ২০১৩ সালে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছিল ‘মহাসেন’। নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সেখানকার সাবেক একজন রাজার নাম ছিল ‘মহাসেন’, যিনি ওই দ্বীপে সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছিলেন। ফলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এমনকি শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে সেটিকে নামহীন ঝড় বলে বর্ণনা করা হয়। পরবর্তীতে রেকর্ডপত্রে ঝড়টির নতুন নাম নির্ধারণ করা হয় ‘ভিয়ারু’।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply