স্টাফ করেসপনডেন্ট, নরসিংদী:
নরসিংদীতে সিত্রাংয়ের প্রভাবে মেঘনার চরে আটকে পড়া ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে নবদম্পতিসহ ৩৭ বরযাত্রীকে উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) আটকে পড়ার ৯ ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে সদর উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের পঞ্চবটী গ্রামের দক্ষিণ অংশের মেঘনা নদী থেকে তাদের উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন করিমপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন করিমপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেকটর ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, বরযাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন থেকে নরসিংদী শহরের দিকে আসছিল। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নৌকাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি নির্জন বালুচরে আটকে যায়। প্রায় ৯ ঘণ্টা আটকে থাকার পর আমরা ওই নৌকা থেকে নবদম্পতি, নারী, শিশুসহ মোট ৩৭ জনকে উদ্ধার করি।
নৌ পুলিশ ও বরপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে নরসিংদীর থানারঘাট থেকে ৩৫ বরযাত্রী নিয়ে কনে আনার জন্য একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আলোকবালীতে যান ফরহাদ মিয়া। সেখানে মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেল চারটার দিকে কনেকে নিয়ে ওই নৌকায় করে ফিরছিলেন মোট ৩৭ জন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দিনভরই বৃষ্টি হচ্ছিলো। নৌকা মাঝনদীতে আসার পর প্রবল বাতাস বইতে থাকে। এ সময় বাতাসের কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে নৌকাটি। এক পর্যায়ে শ্রীনগরের পঞ্চবটী গ্রামের দক্ষিণ অংশের একটি নির্জন বালুচরে গিয়ে থেমে যায় নৌকাটি। বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত প্রায় ৯ ঘণ্টা সময় তারা সেখানেই আটকে থাকেন। অনেক চেষ্টার পরও সেখান থেকে বেরোতে না পেরে বরের মামা বাচ্চু মিয়া জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চান।
৯৯৯ থেকে করিমপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ব্যবস্থা নিতে বলা হলে নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা প্রবল ঝড়বাতাসের মধ্যেই উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। রাত একটার দিকে চরে আটকে থাকা নৌকাটির সন্ধান পান তারা। পরে নৌকাসহ ৩৭ যাত্রীকে উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে যান তারা। পরে বাকি রাত ফাঁড়িতে কাটিয়ে সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বরযাত্রীরা।
ফরহাদ মিয়া বলেন, ‘শুধু জবান রাখতেই দুর্যোগপূর্ণ এ পরিস্থিতিতে কনেকে উঠিয়ে আনতে গিয়েছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে কনেপক্ষ আমাদের থেকে যেতে বলেছিল। কিন্তু আমরা সবাই ভেবেছিলাম, চলে আসতে পারবো। মাঝনদীতে আসার পরই প্রবল ঝড়বাতাস শুরু হলে আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমাদের নৌকাও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। জনমানবহীন ওই চরের মধ্যে ৯ ঘণ্টা সময় আমরা কীভাবে পার করেছি, আমরাই জানি। ভাগ্য ভালো, খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকলেও আমাদের সঙ্গে থাকা সবাই সুস্থ আছেন। নৌ পুলিশের সহায়তায় আমরা বেঁচে ফিরতে পেরেছি, এটাই বড় বিষয়।
করিমপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক ফরিদুল আলম জানান, উদ্ধারের পর বাকি রাতটুকু ফাঁড়িতে অবস্থানের পর সকালে সবাই নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। সবাই সুস্থ আছেন। এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে নৌপথে কনেকে উঠিয়ে আনার এ আয়োজন তারা না করলেই ভালো করতেন।
/এসএইচ
Leave a reply