একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন ব্রিটেনের নব নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে টেনে তুলতে হবে এশীয় বংশোদ্ভুত এ সরকার প্রধানকে। সেই সাথে, দ্বিধাবিভক্ত কনজারভেটিভ পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করাও হতে যাচ্ছে অন্যতম কাজ।
ঋষি সুনাক এমন এক সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করছেন; যখন রাজনৈতিকভাবে চরম দ্বিধাবিভক্ত তার দেশ ব্রিটেন। আশঙ্কা রয়েছে, আগামী বছরই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবেন ব্রিটেনের লাখ-লাখ মানুষ। তার ওপর রয়েছে লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, চলমান শ্রমিক ধর্মঘট, স্বাস্থ্য খাতে টানাপোড়েন, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মতো ইস্যু। তবে এই মুহূর্তে দেশটির সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি প্রথম এশীয় বংশোদ্ভুত প্রধানমন্ত্রীর সামনে রয়েছে দলকে জোটবদ্ধ রাখার প্রয়াস।
এ প্রসঙ্গে ইউকেআইসিই এর রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট অ্যালান ওয়েগার বলেন, ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতোটা জনপ্রিয় হতে পারবেন- সেটা তার কাজই প্রমাণ করবে। করোনা মহামারির গোটা সময়ে তিনি দক্ষ হাতে সামলেছেন চ্যান্সেলরের দায়িত্ব এবং রাজকোষ। এ অসাধারণ অভিজ্ঞতা ঋষির বড় শক্তি। কিন্তু, সাধারণ ব্রিটিশরা কখনই তাকে পাশে পাননি, ঋষি ছিলেন স্পর্শের বাইরে। সে অবস্থান থেকে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির পাশাপাশি তাকে সামলাতে হবে দলকে।
ব্রিটেনের বিশিষ্ট বাজার বিশ্লেষক জোশুয়া মাহোন এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্রিটিশ অর্থনীতি চরম সংকটে রয়েছে। তবে, লিজ ট্রাস এবং তার সরকারের মতো ভুলভ্রান্তিতে ভরা বাজেট পেশ করবেন না ঋষি সুনাক- এটাই একমাত্র ভরসা। কারণ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কিভাবে তিনি মূল্যস্ফীতি কমাবেন; সেটা নির্ভর করবে তার বাজেট পরিকল্পনার ওপরই।
প্রসঙ্গত, গত এক যুগ ধরে ব্রিটেনের ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরিরা। কিন্তু, বর্তমানে দলটির মধ্যে দেখা দিয়েছে বড় বিভাজন। এ পরিস্থিতিতে, বিরোধী দলগুলোর টিটকারী- ঋষি সুনাকের পদত্যাগ দেখাও সময়ের ব্যাপার। তাদের দাবি- পদত্যাগের নাটকীয়তা বজায় না রেখে; ডাকা উচিৎ আগাম নির্বাচন।
দেশটির বিরোধীদল লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার অ্যাঙ্গেলা রায়নার বলেন, কনজারভেটিভরা যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, সেটারই ধারাবাহিকতা নতুন দলীয় প্রধান নির্বাচন। ব্রিটেন ৩ মাসে, ৩ প্রধানমন্ত্রী পেলো- বিষয়টাই হাস্যকর। এমনকি, ঋষি সুনাক চ্যান্সলর থাকাকালেও অর্থনীতির খুব একটা উন্নতি দেখেনি আমরা। তিনি মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে ব্যর্থ হয়েই দায়িত্ব ছেড়েছিলেন তিনি। কে বা কারা সরকার চালাবে- সেটা নিয়ে জনগণের মাথাব্যাথা নেই। বরং, ক্রমবর্ধমান জীবনব্যয় নিয়েও তারা তটস্থ।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে দলীয় প্রধান নির্বাচনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করেছিলো কনজারভেটিভ পার্টি। সে সময়, অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণেই লিজ ট্রাসের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ঋষি সুনাক। অথচ, মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানেই প্রধানমন্ত্রীর পদ আলোকিত করতে যাচ্ছেন তিনি।
/এসএইচ
Leave a reply