মেরামতের পর গুজরাটি নববর্ষ উপলক্ষে খুলে দেয়া হয়েছিল মোরবী সেতুটি। কিন্তু আনন্দ উৎসবের বদলে রোববার (৩১ অক্টোবর) প্রায় ৫০০ জনকে নিয়ে ছিড়ে পড়ে ঝুলন্ত এ সেতু। এরই মধ্যে ১৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে বহু মানুষ। কিন্তু মেরামতের পরও কেনো ছিড়ে পড়লো সেতুটি, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
মোরবী সেতুটি গুজরাটের একটি ঐতিহ্যবাহী সেতু হিসেবে বিবেচিত। মাচ্ছু নদীর ওপর ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া সেতুটির বয়স হয়েছে ১৪০ বছর। দরবারগড় রাজবাড়ি ও নজরবাগ রাজবাড়িকে সংযুক্ত করতেই আমদাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছিল সেতুটি। নিয়মিত এ সেতু দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকে বেশ গুরুত্ব দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোরবীর দেশীয় রাজারা সেতুটি বানিয়েছিলেন। উনিশ শতকে মোরবীর শাসক ওয়াঘজি রাজাজি ঠাকরের উদ্যোগে এই সেতু নির্মিত হয়। শোনা যায়, সেতু তৈরি করতে ইংল্যান্ড থেকে জিনিসপত্র আনিয়েছিলেন ওয়াঘজি। ১৮৭৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সেতু উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুম্বাইয়ের প্রেসিডেন্সির গভর্নর রিচার্ড টেম্পল। সেই সময় সেতুটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভারতীয় রুপি। ভারতের অন্যতম একটি দর্শণীয় স্থান হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে প্রাচীন এই মোরবী সেতু।
জানা গেছে, সম্প্রতি সেতুটি মেরামত করার জন্য একটি বড় উদ্যোগ নেয়া হয়। ৮-১২ মাস ধরে মেরামতের জন্য মোরবী সেতু বন্ধ থাকবে, এই ঘোষণা দিয়ে চলতি বছরের মার্চে সেতুতে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গুজরাটি নববর্ষের জন্য মাত্র সাত মাসের মাথায় চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এই সেতু। অভিযোগ উঠেছে, মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে কিনা তা খতিয়ে না দেখে এবং পৌরসভার ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ ছাড়াই গত ২৬ অক্টোবর খুলে দেয়া হয় সেতুটি।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পেছনে আরও একটি কারণ আছে। প্রাচীন এই সেতুটিতে একসাথে ১২৫ জনের বেশি উঠতে পারে না। তবে রোববার অর্থাৎ দুর্ঘটনার দিন সেতুটিতে অন্তত ৪০০-৫০০ মানুষ ওঠায় ভার সহ্য করতে পারেনি শতবর্ষী পুরনো সেতুটি। এতেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে সেটি। ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ ছাড়াই সেতুটি খুলে দেয়া এবং ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি মানুষ টিকিট কেটে একসাথে কীভাবে সেতুতে উঠলো সেটি খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।
এসজেড/
Leave a reply