অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালের রূপ ধারণ করেছিল অ্যাডিলেড ওভালে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচ। আসরের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে খাদের কিনারে থাকা পাকিস্তান পুরো আসরজুড়েই তিন ডিপার্টমেন্টে দেখাতে পারেনি ধারাবাহিকতা। সেখানে, একই রোগে ভুগতে থাকা বাংলাদেশের জন্য সেমিফাইনালে যেতে হলে দেখাতে হতো ইতিবাচক মানসিকতা, যেটাকে ইদানীং ধারণ করছে ‘ইন্টেন্ট’ শব্দটি। তবে ব্যাটিংয়ে ছন্দপতনের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারা, ক্যাচ মিস, রান আউট মিসের সাথে বোলিংয়ে ধারের অভাবে প্রশ্ন জাগতে পারে; সেই ইন্টেন্ট কি আদৌ ছিল সাকিব বাহিনীর খেলায়! নাকি এটাই দলের সামর্থ্য?
লিটন দাসের ঝড়ো ব্যাটিং আজ দেখা যায়নি। বড় সংগ্রহ গড়তে সীমিত সামর্থ্যের ব্যাটিং লাইনআপের বাংলাদেশ সেখানেই খায় প্রথম ধাক্কা। তবে নাজমুল শান্ত ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে ১০ ওভারে আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। উল্টো, উইকেট রেখে শেষে ঝড় তোলার পরিকল্পনাই হয়তো ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সৌম্যর বিদায়ের পর ক্রিজে নেমে সাকিব আল হাসানের বিতর্কিত আউটেই পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। শাদাব খানের বলে এগিয়ে এসে মারার চেষ্টা করলেন সাকিব। ঠিক মতো ব্যাটে-বলে হলো না। বোলারের এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান আম্পায়রার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক । কিন্তু আত্মবিশ্বাসী সাকিব সাথে সাথেই নিলেন রিভিউ।
আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিতে দেখা যায়, বল সাকিবের ব্যাট ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে দেখা মিলেছে স্পাইকের। তবে ব্যাট মাটির কাছে থাকায় স্পাইক নিয়ে দেখা দেয় সন্দেহ। রিপ্লের প্রতিটি ফ্রেমে, এমনকি ব্যাট যখন শূন্যে তখনও দেখা যায় স্পাইক রয়েছে। কিন্তু মাঠের আম্পায়ারের প্রতিই সমর্থন জানালেন জিম্বাবুয়ের টিভি আম্পায়ার ল্যাংটন রুসেরি। আর মাঠ ছাড়ার আগে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাকিব আল হাসান নিজেও। আম্পায়ারদের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেও দেখা যায় টাইগার অধিনায়ককে। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত! মাঠ ছাড়তে হয় সাকিবকে। আর বাংলাদেশ হারায় মোমেন্টাম।
কিন্তু এরপরও আফিফ-মোসাদ্দেক-নুরুলরা ছিলেন। কিন্তু যা খুঁজে পাওয়া যায়নি তা হচ্ছে সেই ইন্টেন্ট। প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হয়ে ম্যাচের মোমেন্টাম আবার নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেয়ার সেই মানসিকতাই যেন অনুপস্থিত ছিল মিডল অর্ডারে। রান রেট বাড়ানোর তাড়নাই দেখা যায়নি মিডল ও লেট মিডল অর্ডারের খেলায়। আর তাই, বোলারদের লড়ার মতো সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড।
পুরো আসরেই ধুঁকতে থাকা বাবর-রিজওয়ানকে চেপে ধরলে যে এই রানও তাড়া করতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে পাকিস্তানের, সেটাই তো দেখিয়েছে জিম্বাবুয়ে। আর শুরুতেই ব্রেক থ্রু তুলতে পারলে তো কথাই নেই। ফর্মের তুঙ্গে থাকা তাসকিনের দারুণ আউটসুইঙ্গারে প্রথম ওভারেই সেই সুযোগ চলে এসেছিল বাংলাদেশের হাতে। তবে তা ফসকে যায় নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভস থেকে। রিজওয়ানকে আউট করার সহজতম সুযোগ হেলায় হারানোর মাশুল গুনতে হয় বাংলাদেশকে; পাকিস্তান পায় ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি। ম্যাচ প্রকারান্তে সেখানেই শেষ।
তবে আফসোস বাড়ে মোহাম্মদ নওয়াজের রানআউট মিসের ঘটনায়। বাবর-রিজওয়ানের জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ যখনই ম্যাচে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে তখনই এবাদতের বলে পরাস্ত হয়েছিলেন নওয়াজ। বোলার-ফিল্ডারদের সমস্বরে আবেদনের ফাঁকে রান নেয়ার সিদ্ধান্তে ভুল বোঝাবুঝি ঘটে দুই প্রান্তের ব্যাটারের মধ্যে। শান্তর সরাসরি থ্রো স্ট্যাম্প ভেঙে দিলে তৃতীয় উইকেটের পতনও ঘটাতে পারতো বাংলাদেশ। ওভারথ্রোতে আবার চার রানও হজম করতে হয়েছে সাকিব বাহিনীকে। এক্সট্রা খাতে পাকিস্তানের ৬ রানের বিপরীতে বাংলাদেশ হজম করেছে ১১।
লো স্কোরিং ম্যাচে এসবই বড় নিয়ামক। যার যোগসূত্রে নির্ধারিত হতে পারে জয়ী-পরাজিতের নাম। বাঁচা-মরার ম্যাচে কোনো ডিপার্টমেন্টের ঘাটতি পুষিয়ে দেয়ার বাড়তি চেষ্টা থাকতে হয় অন্য ডিপার্টমেন্টে। আর সেই ‘ইন্টেন্ট’র অভাবেই হয়তো আরও একবার আশা জাগিয়েও এক প্রকার খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
আরও পড়ুন: যে ভুল সিদ্ধান্তে এলোমেলো বাংলাদেশ
/এম ই
Leave a reply