জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অনশনরত মানবাধিকারকর্মী আলা আব্দেল ফাত্তাহ

|

কায়রোর ফরেন অফিসের সামনে প্রতিবাদরত আলা আব্দেল ফাত্তেহ এর বোন সানা।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মিসরে কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী আলা আব্দেল ফাত্তাহ (৪০)। গত রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে পানি পানও বন্ধ করে দিয়েছেন অনশনে থাকা এ ব্রিটিশ নাগরিক। মিসরে শুরু হওয়া ‘কপ সম্মেলনে’ বিষয়টি তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তবে ফাত্তাহর পরিবার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, যেকোনো সময় হতে পারে জীবনাবসান তার। তাই খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন তাদের।

মিসরের কারাগারে থাকা ৬০ হাজার রাজনৈতিক বন্দির একজন আলা আব্দেল ফাত্তাহ। নিজের আটকাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গত ২২০ দিন ধরে অনশন করছেন তিনি। এমনকি বন্ধ করে দিয়েছেন পানি পানও।

মিশরীয় মানবাধিকার কর্মী আলা আব্দেল ফাত্তাহ।

আলাকে নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখনই মিসরে শুরু হলো জলবায়ু সম্মেলন। কায়রোর শার্ম আল শেখে কপ টোয়েন্টি সেভেনে যোগ দিতে জড়ো হচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আলার পরিবারকে দেয়া চিঠিতে আশ্বাস দিয়েছেন, কপ সম্মেলনে তুলবেন বিষয়টি। মিসরীয় সরকারের সাথে আলোচনার পর জানাবেন আপডেট।

তবে আলা’র পরিবারের দাবি, তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত অক্টোবরে পরিবারের সদস্যদের সাথে সর্বশেষ দেখা হয় তার। তখনও তিনি প্রচণ্ড দুর্বল ছিলেন- বলে জানিয়েছেন আলা’র বোন সানা সাইফ।

সম্প্রতি পরিবারকে লেখা চিঠিতে আলা জানান, ৬ নভেম্বর শেষবারের মতো পানি পান করবেন তিনি। তাই, ২/১ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তাকে বাঁচানো যাবে না-বলে আশঙ্কা সানার। ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে টানা ১৫ দিন লন্ডনস্থ ফরেন অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তিনি।

আলা আব্দেল ফাত্তাহর বোন সানা সাইফ বলেন, আলা বাঁচার জন্যই লড়ছে। তবে প্রেসিডেন্টের অফিস তাকে আজীবন জেলে রাখতে চায়। আমরা স্বাভাবিক জীবন চাই। আলা ব্রিটিশ নাগরিক। রাজনৈতিকভাবে তাকে বাঁচানোর সুযোগ আছে। ব্রিটিশ সরকার যদি জোর দেয় তাহলে এটা অবশ্যই সম্ভব।

২৮ বছর বয়সী সানা নিজেও তিন দফা জেল খেটেছেন মিসরে। বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে রোববার (৬ নভেম্কাবর) কায়রোতে গেছেন সানা। সানার গলায় এখন শুধু তার ভাইকে বাঁচানোর আকুতি।

সানা আরও বলেন, ভাইকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করতে এখানে এসেছি। একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার যে, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যদি তার মৃত্যু এড়াতে চায়, এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো কপ এর আলোচনার মধ্যেই তার জীবনাবসান হতে পারে।

এদিকে, এ সম্মেলনই হতে পারে আলা’কে বাঁচানোর শেষ সুযোগ- এমনটা বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

আলা’র প্রসঙ্গে অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, হাতে খুব বেশি সময় নেই। একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে বাঁচাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না ব্রিটিশ সরকার। কর্তৃপক্ষ যদি তার মৃত্যু না চায় তবে ২৪ বা ৪৮ সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে কপ টোয়েন্টি সেভেনের প্রতিটি আলোচনায় আলা’র নাম আসবে।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় আলোচনায় আসেন মানবাধিকারকর্মী আলা আব্দেল ফাত্তাহ। মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। গত নয় বছর ধরেই কারাগারে বন্দি তিনি। ২০২১ সালে, ভুয়া তথ্য প্রচারের অভিযোগে আলা’র সাজা বাড়ানো হয় আরও ৫ বছর।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply