১০ টাকা ফিতে ৪৩ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন গরীবের ডাক্তার এবাদুল্লাহ

|

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

দিন দিন মূল্য বেড়েছে সবকিছুর, তবে বাড়েনি একজন এমবিবিএস ডাক্তারের চিকিৎসা ফি। সিভিল সার্জন থাকাকালীন চিকিৎসা ফি নিতেন ৫ টাকা, ২০১০ সালে অবসরে গিয়ে ফি নির্ধারণ করেন ১০ টাকা। সেই ১০ টাকা ফিসেই এখনো দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা। ৪৩ বছর ধরে এভাবেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন সাতক্ষীরার গরীবের ডাক্তার খ্যাত ডা. এবাদুল্লাহ। অল্প খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবায় সুস্থ হয়ে খুশি রোগী ও তার স্বজনরাও।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের খান মার্কেটের নওয়াব মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসেন ডা. এবাদুল্লাহ। সেখানেই মাত্র ১০ টাকা ফিতে নানা বয়সী রোগীর চিকিৎসা সেবা দেন তিনি। প্রতিদিন শতাধিক মানুষ শরণাপন্ন হন তার চেম্বারে। টানা ৫ দশক ধরে এভাবেই সেবা দিচ্ছেন গরীব-অসহায় রোগীদের।

ডা. এবাদুল্লাহর প্রতিষ্ঠা করা নওয়াব মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পদে কাজ করছেন ১০ জন। তাদের বেতন ভাতাও দেয়া হয় এখনকার আয় থেকেই। দেশের চরম মূল্যবৃদ্ধির এই সময়েও ফি বাড়াননি ডা. এবাদুল্লাহ। নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নামে বাড়তি টাকা আদায়ের প্রবণতা। প্রয়োজনের তাগিদে পরীক্ষার দরকার পড়লে সেটির ফিও তুলনামূলক অনেক কম।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানায়, ফি নেয় মাত্র ১০ টাকা। আগে নিতো ৫ টাকা। সেবার মান ভালো। অন্য জায়গায় গেলে বহু ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়। কিন্তু স্যারের এখানে এসব দেয় না। পরীক্ষা কিছু দিলেও সেগুলো খুবই স্বল্প খরচে করা যায়।

সাতক্ষীরা নওয়াব মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাব ইনচার্জ মাহমুদুল হক বলেন, আমরা সব পরীক্ষার ফিসও ন্যূনতম রাখি। একটা সিবিসি পরীক্ষা বাইরে ৪০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত নেয়। কিন্তু আমাদের এখানে মাত্র ১৮০ টাকায় করা হয়। রিপোর্টের মানও ভালো।

চিকিৎসকের সহকারী নন্দ দুলাল রায় বলেন, গরীব রোগীদের জন্য প্যাথলজি স্বল্প মূল্যে করা হয়। আর স্টাফদের বেতন-ভাতা স্যারের ফিস এবং প্যাথলজি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকেই বহন করা হয়।

ডা. এবাদুল্লাহর এমন মহৎ কাজে গর্বিত তার সন্তানরা। চিকিৎসক নেতারা বলছেন, একটি অন্যদের জন্য শিক্ষণীয়।

এ নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সাতক্ষীরা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ডা. এবাদুল্লাহর উদ্যোগ আমাদের সমস্ত ডাক্তারদের জন্য শিক্ষণীয় উদাহরণ যে, কতটা নিঃস্বার্থভাবে জনগণের সেবা করা যায়।

ডা. এবাদুল্লাহর ছেলে নিয়াজ ওয়াহিদ জিমি বলেন, আমাদের হয়তো অনেক টাকা-পয়সা নেই কিন্তু আমার বাবার কাজ যখন সমাজের সর্বস্তরের লোক ভালো বলে, তার সুনাম করে; তখন গর্বে আমাদের বুকটা ভরে যায়।

স্বল্প মূল্যে মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কারণ জানিয়ে গরীবের ডাক্তারখ্যাত সাতক্ষীরার অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. এবাদুল্লাহ বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম সকালে এ পাড়ায় একজন মারা গেছেন, আর বিকেলে ওই পাড়ায় আরেকজন। সেই সময় ডায়রিয়া আর গুটি বসন্তের ব্যাপক প্রকোপ ছিল। চিকিৎসা করার মতো ডাক্তারও ছিল না, তাদের সামর্থ্যও ছিল না। তখন থেকেই মনে হতো আমি এই ডাক্তারি পেশাটাই নেবো। আর দশ টাকা ফি আমি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিই।

এএআর/ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply