বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা যোগাতে পারছিলেন না দিনমজুর বাবা, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

|

মামুনের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা তুলে দিচ্ছেন বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

টাকার অভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের চান্স পাওয়ার পরেও ভর্তি হতে পারছিলেন না মামুনুর রশিদ। অবশেষে বদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ভর্তি নিশ্চিত হওয়ায় আনন্দিত মামুন।

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে মামুনের হাতে ভর্তির টাকা তুলে দেন বদরগঞ্জের ইউএনও।

জানা গেছে, রংপুরের বদরগঞ্জের মধুপুর রাজারামপুর এলাকার দিনমজুর শাফায়াত হোসেনের পুত্র মামুনুর রশিদ এবার জগন্নাথ এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু ভর্তি হওয়ার টাকা কোনোভাবেই যোগাড় করতে পারছিলেন না মামুনের দিনমজুর বাবা। কারণ পাঁচ ছেলে মেয়ের দৈনন্দিন খাবার জোগাড় করাই তার পক্ষে একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলাকা সূত্রে জানা গেছে, শৈশব থেকেই মেধাবি ছাত্র মামুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে, প্রাইভেট-টিউশন পড়িয়ে বদরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। টিউশন পড়িয়ে জমানো টাকা দিয়ে পরীক্ষা দেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায়ও উত্তীর্ণ হন মামুন। ছোটবেলা থেকে আইন বিভাগে উচ্চশিক্ষা নেয়ার প্রবল আগ্রহ ছিল তার। কিন্তু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ভর্তির চান্স পেলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় টাকা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনেন স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘আগামীর বাংলাদেশ’।

আর এরপরই তার পাশে দাঁড়িয়েছে বদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ মামুনের হাতে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা তুলে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা পাওয়ার উচ্ছ্বসিত মামুন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার প্যাশন ছিল আমি আইন বিভাগে উচ্চতর ডিগ্রি নেবো। ইন্টারমিডিয়েট শেষ করেই আমি এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হলেও সেখানে আইন বিষয় না আসায় ভর্তি হইনি। পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি আইনে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হই। কিন্তু কোনোভাবেই ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারছিলাম না। বিষয়টি আগামীর বাংলাদেশের বড় ভাইদেরকে জানাই। তারা আমার ব্যাপারটি ইউএনও মহোদয়কে জানালে তিনি আমার ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সব টাকার ব্যবস্থা করেন। আমার প্রতিজ্ঞা, ভালোভাবে পড়াশোনা করে দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।

মামুনের প্রতিবেশী ও ‘আগামীর বাংলাদেশ’ এর কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির বলেন, মামুনের বাবা দিনমজুর। ছোটবেলা থেকেই তাকে পড়াশুনার জন্য কোনো অর্থের যোগান দিতে পারেননি তিনি। অনেক কষ্ট করে প্রাইভেট পড়িয়ে সে পড়াশোনা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারছিল না শুধুমাত্র টাকার অভাবে। ইউএনও মহোদয় তাকে ভর্তির জন্য টাকা দিয়েছেন; এজন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।

‘আগামীর বাংলাদেশ’ এর আহ্বায়ক সেলিম সরকার জানান, আমরা তাকে ফ্রিতে কোচিং করিয়েছি। আইন বিভাগে চান্স পেয়েও তার ভর্তি অনিশ্চিত ছিল। ইউএনও স্যার তাকে ভর্তির টাকা দিয়েছেন। তার উচ্চশিক্ষা শুরু করতে আর কোনো বাধা রইল না।

বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ জানান, বিষয়টি আমি জানা মাত্রই তার ভর্তির বন্দোবস্তের উদ্যোগ নিই। ভর্তির টাকা তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন আশা করে ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনে সে ভূমিকা রাখবে। টাকার অভাবে কারো উচ্চশিক্ষা যেনো বিঘ্নিত না হয় সেদিকে উপজেলা প্রশাসন খেয়াল রাখছে বলেও জানান তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply