সাড়ে চারশ’ কোটি ডলারের ঋণ এখন চূড়ান্ত। সাত কিস্তিতে ছাড় হবে ঋণের অর্থ। শর্ত মানার ওপর নির্ভর করছে একেক কিস্তির অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। ঋণের ক্ষেত্রে কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ নাকচ করেছে সরকার। কিন্তু অন্যান্য খাতের সংস্কার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। বলা হচ্ছে, জনগণের ঘাড়ে ভর্তুকির ভার বেশি চাপালে সংকট বাড়বে। অর্থনীতির সংকটাপন্ন সময়ে এই সহায়তা বড় ভূমিকা রাখবে না। তবে, অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ পাবার দ্বার উন্মুক্ত হবে।
দুই সপ্তাহ ধরে চলে দৌড়ঝাপ। ঋণ প্রাপ্তিতে সক্ষমতা যাচাই করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চাইলে, খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ মিশন।
১৫ দিন পর্যালোচনার পর এখন নিশ্চিত, পাওয়া যাবে ঋণ। কিন্তু পরিপালন করতে হবে একাধিক শর্ত। কৃষি খাতে ভর্তুকি তুলে নেবার প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ। কিন্তু ভর্তুকি তুলে নেবার প্রস্তাব বাড়াবে খাদ্য সংকট। প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন শর্ত মানা কি সম্ভব?
এ প্রসঙ্গে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানী নিরাপত্তা, উদ্যোক্তাদের উৎপাদন সক্ষমতা- এগুলোই শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য পাওয়া উচিত। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের অনেকগুলো সংস্কার দরকার।
বেড়েছে আমদানি ব্যয়। সহনীয় পর্যায়ে নেই মূল্যস্ফীতিও। কমছে রেমিটেন্স প্রবাহ। রিজার্ভ নিয়েও উদ্বেগের শেষ নেই। অর্থনীতির এমন সংকটাপন্ন সময়ে সাত কিস্তিতে পাওয়া এ ঋণ কি যথেষ্ট?
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, টাকার অংকে; এটা যে আমাদের রিজার্ভে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে তা মনে হয় না। অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে- এই ভাবনা থেকে আমাদের অন্য যেসব উন্নয়ন সহযোগী আছে যেমন ধরুন-ওয়ার্ল্ড ব্যংক, এডিবি বা জাইকা তারা বাজেটারি সাপোর্ট নিয়ে আসবে।
দীর্ঘদিন ধরেই রাজস্ব খাতের সংস্কার চায় আইএমএফ। কিন্তু দৃশ্যমান তেমন অগ্রগতি এক্ষেত্রে নেই। প্রণোদনা দেবার ক্ষেত্রেও খাত নিদিষ্ট করার তাগিদ দিয়েছে এই ঋণদাতা সংস্থা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, ওরা ভর্তুকিকে একেবারে তুলে দেয়ার কথা বলছে না। ওরা বলছে, ভর্তুকি কমানোর কথা এবং যাদের প্রয়োজন বিশেষ করে যারা জীবিকা সংকটে থাকে তাদের কাছে পৌছানো। মূল্যের মাধ্যমে যে ভর্তুকীটা দেয়া হয় সেটা তো ধনী-গরীব সবাই পায়। এই জায়গাটা থেকেই বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলছে তারা।
প্রসঙ্গত, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসবে ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ। অন্যন্য উৎস থেকেও অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
/এসএইচ
Leave a reply