কিশোর গ্যাং মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি এমনকি মানুষ খুন, সবকিছুই তাদের কাছে তুচ্ছ। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এতো বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা? গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও যমুনার অনুসন্ধান বলছে, রাজনৈতিক নেতাদের মদদে দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তারা। পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠা এসব কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য রুখতে তালিকা হচ্ছে মদদদাতাদের।
চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মিরপুরের পল্লবীর সি-ব্লকে চলে কিশোর গ্যাং রমজান ও আল-আমিন গ্রুপের তাণ্ডব। চাকু দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিবকে উপর্যুপরি আঘাত করে গ্যাং দুটির সদস্যরা।
অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেও অন্ধকারে তলিয়ে গেছে তার সুন্দর ভবিষ্যৎ। দিতে পারেনি এসএসসি পরীক্ষা। এমনকি সাহায্য ছাড়া এখন আর হাঁটাচলাও করতে পারে না রাকিব।
কিন্তু ঘটনার পর গ্রেফতারকৃতরা, এরইমধ্যে বেরিয়ে গেছে জামিনে। মামলা তুলে নিতে হুমকিও দিচ্ছে তারা এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
অপরদিকে, গত ১ নভেম্বর ধামরাইয়ের একটি রিসোর্টে পুল পার্টি করে ফেরার পথে সংঘর্ষ হয় রাজধানীর হাজারীবাগের দুই দল টিকটকারদের। বাসে গাঁজা সেবন এবং এক নারীকে উত্ত্যক্তের জেরে ছুরিকাঘাত করা হলে মারা যায় রাব্বী নামের একজন।
এমন ঘটনা নতুন নয়। গত ২৩ অক্টোবর পল্লবী সোনার বাংলা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে হানা দেয় দুবৃর্ত্তরা। ৫ তলার একটি ফ্লাটে ঢুকে নির্যাতন করা হয় দুই প্রবাসীর স্ত্রীকে। লুটে নেয়া হয় নগদ টাকা আর স্বর্ণালঙ্কার। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বাসায় প্রবেশ করছে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েক সদস্য। আর তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ।
এই ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগীরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এজাহার থেকে মূলহোতা পারভেজের নাম বাদ দিয়েছে পুলিশ। এখনও গ্রেফতার হয়নি কেউ।
গোয়েন্দা তথ্য ও যমুনার অনুসন্ধান বলছে, পারভেজ স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর অনুসারী। তাই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ। ঘটনার প্রমাণ মিলেছে এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর সঙ্গে কথা বলেও। পারভেজের পক্ষেই সাফাই গাইলেন তিনি।
ঢাকা-১৬’র সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ বলেন, পারভেজ এটার সাথে কোনোভাবেই জড়িত না। তার আশপাশে যে অন্য গ্রুপ আছে, তারা কাজ করে আর দায় দেয় পারভেজের।
রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় পুরো ঢাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ২০০ কিশোর গ্যাং। যাদের সদস্য সংখ্যা ২৫০০ হাজারের বেশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এদের মদদদাতাদেরও তালিকা হচ্ছে।
র্যাবের মুখপাত্র ডিএমপি কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা ইতোপূর্বে বিভিন্ন মদদদাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। সেখানে সাবেক এমপি থেকে শুরু করে অনেকেই আছেন। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে আরও বেশ কয়েকজন আছেন। গোয়েন্দারা কাজ করছে। তদন্ত সাপেক্ষে যদি এই ধরনের অপরাধের ফুটপ্রিন্ট আমরা প্রমাণ করতে পারি তাহলে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয় বলে অভিমত সকলের।
এটিএম/
Leave a reply