২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে চান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য দলের প্রাইমারিতে (প্রাথমিক বাছাই) লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও ট্রাম্পের সামনে কঠিন পথ দেখছেন বিশ্লেষকরা। ভোটে লড়তে তার জন্য অন্তত ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে বিবিসি।
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে দলীয় প্রাইমারিতে লড়াইয়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, এখন থেকে আমেরিকার প্রত্যাবর্তন শুরু। আমাদের দেশকে বাঁচাতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা অধঃপতনের দিকে যাচ্ছি।
নানা কারণে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভাগ্য ভালো যাচ্ছে না। তাও তিনি আরেক দফা নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চাইছেন। অথচ ইতিহাস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে পরাজিত প্রেসিডেন্টের বিরতি দিয়ে আবার ভোটে দাঁড়ানো অতি বিরল ঘটনা।
নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য ট্রাম্পের এমন কিছু ইস্যু আছে, যার সঙ্গে অন্য কোনো প্রার্থীর মিল নেই। এর মধ্যে রয়েছে অপরাধ, অভিবাসন। এসব ইস্যু মূলত যুক্তরাষ্ট্রের তৃণমূল রক্ষণশীলদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের রয়েছে নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠী। মার্কিন এমন নাগরিকদের তিনি ভোটকেন্দ্রে নিতে পারেন, যারা কিনা সাধারণত ভোট দেন না। তার আরেকটি শক্তির জায়গা হলো, চার বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে রিপাবলিকান পার্টিতে তার সমর্থকেরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছেন। এসব তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।
এদিকে, রিপাবলিকান দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে ভোটে লড়তে আগে দল থেকে মনোনয়ন পেতে হবে ট্রাম্পকে। নির্বাচনের পাক্কা দুই বছর আগে তার প্রার্থিতা ঘোষণাকে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপে ফেলার কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সবার আগে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও ট্রাম্পের সামনে কঠিন পথ দেখছেন বিশ্লেষকরা। ভোটে লড়তে তার জন্য অন্তত ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে বিবিসি।
অতীত ইতিহাস
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার আগে ট্রাম্পের কোনো রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল না। তাই তার সমালোচনা করার মতো বিষয় কম ছিল। ফলে ভোটারদের ধারণা ছিল, তার মাধ্যমে অনেকের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে। কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই। ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প কর কমানো, অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থার সংস্কার করেছেন। আবার ব্যর্থও হয়েছেন। ওবামা কেয়ার নামে পরিচিত জনস্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। করোনা মহামারিতে তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
কংগ্রেস ভবনে হামলা
আগামী নির্বাচনে এই বিষয় ট্রাম্পের জন্য বড় বাধা হয়ে উঠবে। ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা ছিল দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন। এতে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও ওঠে। এ বিষয়ও সামলাতে হবে ট্রাম্পকে।
আইনি ঝামেলা
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখন বেশ কিছু মামলা চলছে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফল বদলে দেয়ার চেষ্টা করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিউইয়র্কে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। আবার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসরের পর গুরুত্বপূর্ণ নথি তিনি কীভাবে সামলেছেন, সেসব নিয়েও তদন্ত হচ্ছে। এসব মামলায় তার সাজা হতে পারে। কথা উঠেছে, আসলে এসব মামলা আটকে দিতে ট্রাম্প প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।
কঠিন প্রতিপক্ষ
আট বছর আগে ট্রাম্পের প্রথম প্রাইমারিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফ্লোরিডার গভর্নর জেব বুশ। তিনি তখন অত শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন না। এবারও ফ্লোরিডার গভর্নরের সঙ্গে হয়তো তাকে লড়তে হতে পারে। তবে লড়াই সহজ হবে না। কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার দুবারের জয়ী গভর্নর রন ডিস্যান্টিস। মধ্যবর্তী নির্বাচনে যখন অনেক জায়গায় রিপাবলিকান প্রার্থীরা খারাপ করেছেন, তখন বিশাল ব্যবধানে জিতেছেন ডিস্যান্টিস। রিপাবলিকানদের সম্ভাবনাময় তারকা প্রার্থী বিবেচনা করা হচ্ছে তাকে।
জনপ্রিয়তায় ভাটা
এখনো অনেক রিপাবলিকান ভোটার ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গেলেও সাবেক প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। রিপাবলিকানদের মধ্যে সম্প্রতি রন ডিস্যান্টিস ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি জরিপ চালানো হয়। এতে এগিয়ে ছিলেন ফ্লোরিডার গভর্নর।
বয়সেও বিপত্তি
বয়সও একটা ব্যাপার বটে। ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে জিতলে তখন তার বয়স হবে ৭৮ বছর। জো বাইডেনও এই বয়সে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ট্রাম্প জিতলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রবীণ প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি। রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে যে লড়াই করতে হবে, সেই লড়াই ট্রাম্প করতে পারবেন কিনা, সেটি দেখার বিষয়।
ইউএইচ/
Leave a reply