Site icon Jamuna Television

কৃষক বাবারা চান না সন্তান কৃষক হোক

তাজনুর ইসলাম:

কৃষক বাবারা এখন আর চান না তার সন্তানও কৃষিকাজ করুক। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষির গুরুত্ব বাড়লেও, বাড়েনি কৃষকের সামাজিক মান-মর্যাদা। কঠোর পরিশ্রম ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে দিনদিন পেশা হিসেবে কৃষির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন অনেকে। কৃষকরা জানিয়েছেন, যারা চাষাবাদ করছেন; অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা কৃষিতে আছেন।

বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, হেমন্তের মিহি রোদে একমাত্র নাতিকে সঙ্গে নিয়ে ভুট্টাখেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত ষাট পেরোনো খলিলুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে, বদলে যাওয়ার সব গল্পই তিনি দেখেছেন নিজ চোখে। গল্পে গল্পে জানালেন, একমাত্র সন্তানকে বেশিদূর পড়াতে না পারলেও কৃষিতে আনেননি। সঙ্গে থাকা নাতিও স্কুলে পড়ছে। খলিলুর রহমান জানালেন, নানা বাস্তবতায় কখনোই চাননি পরের প্রজন্ম কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিক।

খলিলুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, আমি চাইনা আমার সন্তান কৃষিকাজ করুক। মাঠ কাজ করা খুব কষ্ট। রোদ বৃষ্টি কাঁদায় কাজ করতে হয়। সে হিসেবে তেমন পয়সাও নেই। কিন্তু যারা চাকরি করে; তাদের এভাবে কাঁদার মধ্যে বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করতে হয় না। তারা মাস শেষে ক্যাশ টাকা পাচ্ছে।

একই সুর আরও অনেকের কণ্ঠে। সন্তানের যেনো পরিশ্রম কম হয়, তা নিশ্চিত করতে বিকল্প পেশার দিকেই উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। আনোয়ার হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, আমরা এতো পরিশ্রম করি। সারাদেশের মানুষের মুখে আমাদের উৎপাদন করা খাবার তুলে দিই। কিন্তু আমাদেরই কোনো মূল্যায়ন নাই। কৃষক শুনলেই সবাই গুরুত্বহীন মনে করে। মানুষের মধ্যে একটা কথা বলারও সুযোগ নেই। অফিস আদালতে গেলে লুঙ্গি পরা দেখলে এক রকম মান আর প্যান্ট-শার্ট পরে গেলে আরেক রকম সম্মান।

কৃষক আব্দুর সাত্তার বলেন, আমাদের কোনো সামাজিক মান মর্যাদা নেই। গ্রামে একটা সালিশ দরবার বসলে সেখানে আমাদের কথা বলা সুযোগ নাই। যারা শিক্ষিত, চাকরিজীবী অথবা ব্যবসায়ী তারা তো কৃষকদের কথাই বলতে দেয় না।

কঠোর পরিশ্রমের বিপরীতে কম মুনাফা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানা অনিশ্চয়তা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার সংকট এবং যথাযথ সরকারি সহযোগিতার অভাবের মতো বিষয়কে কৃষি পেশার প্রতি অনীহার মূল কারণ হিসেবে বর্ণনা করছেন কৃষকরা।

এ বিষয়ে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য পায়; তার জীবন-জীবিকা যেন যথাযথভাবে চলে এটা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি তাদের সামাজিক মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক নিশ্চয়তাটুকু দিতে পারি তাহলে এই অনীহা দূর করা সম্ভব হবে। আর কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট্রও ভালো থাকবে।

এএআর/

Exit mobile version