একে নাটকীয়তা বললেও কম বলা হবে। শুরু থেকেই অঘটনের জন্ম দেয়া কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘ই’র শেষ পর্বের ম্যাচ দুটো ক্ষণে ক্ষণে বদলেছে রঙ। কখনো মনে হচ্ছিল গ্রুপ টপার স্পেনের সাথে ‘রাউন্ড অফ সিক্সটিন’র টিকিট কাটতে যাচ্ছে জার্মানি, কখনও মনে হচ্ছিল কোস্টারিকা। এরমধ্যে সকল হিসেব উলোটপালট করে দিয়ে জাপানই হলো টেবিল টপার। আর জার্মানদের আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফসল ঘরে তুললো একপর্যায়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় থাকা স্পেন।
কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মুসিয়ালারা। ম্যাচের দশম মিনিটে ডেভিড রমের তুলে দেয়া বলে সার্জিও ন্যাব্রির দুর্দান্ত হেডে লিড নেয় চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ম্যাচের ১৪-তম মিনিটে মুসিয়ালার একক নৈপুণ্যে আবারও জার্মানদের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়। তবে গোলপোস্ট ঘেঁষে বল বেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় দারুণ এই আক্রমণটি। প্রায় পুরোটা সময় কোস্টারিকার ডি বক্সের আশেপাশে ঘুরতে থাকে বল। ৩৯-তম মিনিটে পোস্টে শট নেন ন্যাব্রি। তবে অসাধারণ দক্ষতায় সেটি প্রতিহত করেন কোস্টারিকার গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। ম্যাচের ৪২ জার্মান ডিফেন্সের ভুলে দারুণ এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন কোস্টারিকার ক্যাম্বেল। তার পোস্টে পাঠানো বল ফিস্ট করে গোলবারের ওপরে তুলে দেন ন্যুয়ার। ফলে ১-০ ব্যবধান ধরে রেখেই বিরতিতে যায় জার্মানরা।
কে জানতো এই ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৫ গোল দেখা যাবে? ৫৮-তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ প্রতিহত করেন ন্যুয়ার কিন্তু ফিরতি বলে গোল দেন তেজেডা। এরপর লিড নেয়ার চেষ্টায় মুহুর্মুহু আক্রমণ করা জার্মানদের জালে উল্টো ফ্রি কিক থেকে পাওয়া বল জালে জড়ান পাবলো ভারগাস। কোস্টারিকা ২- ১ জার্মানি! এমন সমীকরণে চলতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের খেলা।
৭৩-তম মিনিটে জার্মানদের ম্যাচে ফেরান কাই হ্যাভার্টজ। ৮৫-তম মিনিটে এনে দেন লিডও। কিন্তু, নকআউট পর্বে যাওয়ার জন্য এ ব্যবধানে জয় যে যথেষ্ট নয়। ব্যবধান বড় হতে হবে- এমন সমীকরণে আহত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়া জার্মানদের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত হয় কোস্টারিকার গোলবারে। আর পোস্টে ঢুকতে যাওয়া বল ঠেকানোর জন্য তো কেইলর নাভাস ছিলেনই।
ম্যাচের ৮৯ মিনিটের ক্রুগের গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হলেও পরে ভিএআর দেখে মিনিটখানেক পর সেটি বৈধ ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু সব হিসেব যে ততক্ষণে জার্মানদের বিপক্ষে চলে গেছে। জাপান, কোস্টারিকা ছাপিয়ে স্পেনের সাথে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা চলছে। যেখানে +৬ গোল গড় স্পেনের, জার্মানদের সেটি +১।
দ্বিতীয়ার্ধের এক পর্যায়ে রাউন্ড অফ সিক্সটিনের সম্ভাবনা জাগানো কোস্টারিকাও ততক্ষণে স্বপ্নভঙ্গের যাতনায়। জাপানের কাছে ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে আকস্মিক ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকা স্প্যানিশ জাহাজ নিরাপদে ভিড়লো তীরে।
হলি ফ্রাইডেতে ফুটবল সবটুকু সৌন্দর্য মেলে ধরতে চেয়েছে। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি জাপানকেই।
Leave a reply