কোপা আমেরিকার ফাইনালের পর ১৬ ম্যাচ আর বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে সতেরো ম্যাচ পর হারলো ব্রাজিল! গোলশূন্য ড্র হওয়ার কথা যে ম্যাচের সে ম্যাচের চেহারা বদলে গেলো এক মুহূর্তে! ভিনসেন্ট আবুবাকারের অবিশ্বাস্য এক গোলে ফুটবল পরাশক্তি ব্রাজিলকে হারিয়েছে আফ্রিকার অদম্য সিংহ ক্যামেরুন। ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে পরাজয়ের স্বাদ দেয়া প্রথম ও একমাত্র আফ্রিকান দল এখন ক্যামেরুন। নিঃসন্দেহে ক্যামেরুনের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় রাতগুলোর একটি এটি।
নয় পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা ব্রাজিল ম্যাচের শুরু থেকেই ছিলো আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায়। শুরু থেকেই ক্যামেরুনের বুকে কাঁপন ধরানো সব আক্রমণ করতে থাকে তিতে শীষ্যরা। ম্যাচের ১৪ মিনিটে ফ্রেডের ক্রস থেকে আসা মার্টিনেল্লির হেডে প্রথম গোলটি পেতে পারতো ব্রাজিল। কিন্তু ক্যামেরুনের গোলরক্ষক ইপ্যাসির নৈপূণ্যে সে দফায় শুধু একটি কর্নার নিয়ে সন্তষ্ট থাকতে হয় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
ম্যাচের ২০ মিনিটে ব্রাজিলের গোলমুখে দারুণ এক আক্রমণ করে বসে ক্যামেরুন। তবে গোলরক্ষক অ্যাডারসনের দক্ষতায় সে দফা পরাস্ত হয় আফ্রিকার অদম্য সিংহরা। ম্যাচের ২২ থেকে ২৪ মিনিটের মধ্যে বল ছিলো ক্যামেরুনের গোলপোস্টের আশেপাশেই। এ সময় সেখানে ৩ দফা আক্রমণ চালান অ্যান্টনি-মার্টিনেল্লিরা।
ম্যাচের ২৮ মিনিটে বল নিয়ে ক্যামেরুনের গোলবারের দিকে এগোচ্ছিলেন রদ্রিগো; এ সময় গোল থেকে মাত্র ২৫ গজ দূরে তাকে বাজেভাবে ট্যাকল করায় হলুদ কার্ড দেখেন ক্যামেরুনিয়ান মিডফিল্ডার পিয়েরে কুন্ডে। ৩২ মিনিটের সময় আবারও একই জায়গায় রদ্রিগোকে ফাউল করেন ক্যামেরুনিয়ান লেফট ব্যাক কলিন্স ফাই। আগের ম্যাচেও হলুদ কার্ড দেখায় তার দল পরের রাউন্ডে গেলেও তিনি আর সে ম্যাচে খেলতে পারবেন না।
৪৭ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলো ক্যামেরুন। এটি এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলপোস্টে প্রতিপক্ষের প্রথম অন টার্গেট শট। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে স্কোরলাইনে আর কোনো পরিবর্তন না আসায় 0-0 ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় দুইদল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চোট পান তেলেস। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামে মারকুইনহোস। এ সময় ফ্রেড এবং রদ্রিগোর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন গুইমারায়েস ও রিবেইরো। ৬৩ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের বদলি হিসেবে নামেন পেদ্রো। আর, ৭৯ মিনিটে অ্যান্টনির বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রাফিনহা।
৫৫ মিনিটে মারটিনেল্লির শট ঠেকিয়ে দেন ক্যামেরুনের গোলকিপার ইপ্যাসি। ৫৭ মিনিটে আবারও ইপ্যাসির দক্ষতায় অ্যান্টনির শট প্রতিহত হলে কর্নার পায় ব্রাজিল। ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত থেমে থেমে চলে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। ৭৯ মিনিটে অ্যান্টনির বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন রাফিনহা। এরপর বেশ গতি আসে ব্রাজিলিয়ানদের খেলায়। কিন্তু, একের পর এক সুযোগ মিস হতেই থাকে।
কিন্তু, ম্যাচের ফল বদলে যায় ৯২ মিনিটে। ভিনসেন্ট আবুবাকারের অবিশ্বাস্য এক গোলে লিড পায় ক্যামেরুন। এরপর, একদমই ব্যাকফুটে চলে যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বেশ কয়েকবার গোল করার সহজ সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন ব্রুনো গুইমারায়েস, পেদ্রো ও মার্টিনেল্লিরা।
তবে ম্যাচ হারলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে উঠলো ব্রাজিল। আগামী মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) নক আউট রাউন্ডের দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে সেলেসাওরা। শেষ ম্যাচে ইতিহাস রচনা করলেও প্রথম দুই ম্যাচ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট পাওয়ায় কেবল সুখস্মৃতি নিয়েই কাতার ছাড়বে ক্যামেরুন।
/এসএইচ
Leave a reply