সুইজারল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে শক্তিমত্তার জানান দিলো পর্তুগাল

|

বিশ্বকাপ অভিষেকেই গনসালো রামোসের হ্যাট্রিকের সুবাদে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬-১ ব্যবধানের বড় জয় পেয়েছে পর্তুগাল। রামোস ছাড়াও আজ গোল পেয়েছেন পেপে, রাফায়েল গুরেইরো ও রাফায়েল লিয়াও। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে এদিন ম্যাচ খেলতে নামে পর্তুগিজরা। রোনালদোর জায়গায় রামোসকে খেলানো যে আজ ফার্নান্দো সান্তোসের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর, রামোসের এ হ্যাট্রিক জায়গা করে নিয়েছে রেকর্ডবুকে। এটি কাতার বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিক।

প্রথম গোলের পর গনসালো রামোস।

কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন দলের মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে। কাঁধে ছিল পর্তুগালের জার্সিতে জীবনে প্রথমবারের মতো শুরুর একাদশে মাঠে নেমে রোনালদোর বিশাল অস্তিত্বকে ভরাট করার পাহাড়সম দায়িত্ব। সেটা কী দারুণভাবেই না করলেন গনসালো রামোস! বাঁ পায়ের এক স্বপ্নের গোলে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে নকআউট ম্যাচে পর্তুগালকে ১-০ গোলে এগিয়ে দিয়েছেন বেনফিকার এই স্ট্রাইকার।

ব্যবধান বাড়ানোর পর সতীর্থদের সাথে পেপে।

ম্যাচের ১৭ মিনিটে হোয়াও ফেলিক্সের কাছ থেকে ডি বক্সের বামপ্রান্তে যখন তিনি বল পেলেন, তখনও কোনো ঘটনারই আভাষ পাওয়া যাচ্ছিল না। পেছনে ছিলেন সুইস ডিফেন্ডার শার। এমন সময়েই বাম পায়ে বলটাকে এগিয়ে নিয়ে বক্সের সাথে দুরূহ কোণ থেকে যে আগুনে গোলাটি ছুঁড়লেন এই ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার, ইয়ান সমারের ডান পাশ দিয়ে গতি এবং সূক্ষতম কোণের হিসাব জয় করে তা জড়িয়ে যায় সুইজারল্যান্ডের জালে।

এরপর, ৩২ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেসের করা কর্নার থেকে আসা বলে মাথা লাগিয়ে আরেক দফা পর্তুগিজদের এগিয়ে দেন পেপে। আর, এ গোলের মাধ্যমে রজার মিলার পর সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোলের রেকর্ড গড়লেন অভিজ্ঞ এ পর্তুগিজ ডিফেন্ডার। এরপর, প্রথমার্ধে আর কোনো গোল হয়নি।

নিজের দ্বিতীয় গোলের পর গনসালো রামোস।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ছিলো পর্তুগিজরা। এমন আক্রমণাত্মক মনোভাবের সুফল পেতেও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে দিয়েগো দালতের চালানো আক্রমণে ডি বক্সে বেশ সুবিধাজনক জায়গায় পেয়ে আবারও জালে জড়ান ২১ বছর বয়সী পর্তুগিজ স্ট্রাইকার গনসালো রামোস।

বল পায়ে অপরাজেয় ও দুর্দান্ত গনসালো রামোস।

এর চার মিনিটের মাথায় ওটাভিওর ব্যাকওয়ার্ড স্লিক থেকে আসা বল নিয়ে আক্রমণে যায় পর্তুগিজরা। রামোস ডি বক্সের ভেতরে আলতো এক টাচে বল এগিয়ে দিলে আবারও বল জালে জড়ান রাফায়েল গুরেইরো। ম্যাচে ব্যবধান তখন ৪-০।

পর্তুগিজদের হয়ে রাফায়েল গুরেইরোর গোল।

ম্যাচের ৫৮ মিনিটে সুইসদের জন্য স্বান্তনাসূচক ও ঐতিহাসিক গোলটি করেন ম্যানুয়েল অ্যাকেনজি। এটি ১৯৫৪ সালের পর নক আউট রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের প্রথম গোল। এরপর, বেশ কয়েকবার আক্রমণে গেলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি সুইসরা।

সুইসদের পক্ষে ম্যানুয়েল অ্যাকেনজির গোল।

ম্যাচের ৬১ মিনিটে হোয়াও ফেলিক্সের পাস করা বল১ সুইসদের জালে জড়িয়ে হ্যাট্রিক পূর্ণ করেন গনসালো রামোস। এটি কাতার বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিক। আর, ২০০২ সালে মিরোস্লাভ ক্লোসার পর গনসালো রামোসই একমাত্র ফুটবলার যিনি বিশ্বকাপ অভিষেকে হ্যাট্রিক করলেন। এর আগে, ২০১৮ বিশ্বকাপে পানামার বিরুদ্ধে হ্যারি কেন ও স্পেনের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাট্রিকের সুবাদে পুরো টুর্নামেন্টে হ্যাট্রিক হয়েছিলো মাত্র দুটি। আর, এবার এখন পর্যন্ত মাত্র একটি হ্যাট্রিক।

বিশ্বকাপের রেকর্ডবুকে গনসালো রামোস।

ম্যাচের ৭২ মিনিটে হোয়াও ফেলিক্সের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন এ বিশ্বকাপে পর্তুগালের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ৭৬ মিনিটে সুইস ডিফেন্সে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে রোনালদোর নেয়া ফ্রি কিক। আর, ম্যাচের ৮৪ মিনিটে তিনি একবার বল জালে জড়ালেও গোলটি বাতিল হয় অফসাইডের জেরে।

রাফায়েল লিয়াওয়ের গোল।

কিন্তু, ম্যাচের ৯০ মিনিট শেষ হলেও তখনও শেষ হয়নি পর্তুগিজদের গোলক্ষুধা। ৯২ মিনিটে রাফায়েলের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান শেষে বাঁকানো এক শটে সুইস গোলরক্ষক সমারকে একরকম দর্শক বানিয়ে গোল ৬-১ করেন বদলি হিসেবে নামা রাফায়েল লিয়াও।

এ জয়ের মাধ্যমে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করলো ফার্নান্দো গনজালো শিষ্যরা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply