কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি পেয়ে ম্যাচে ফেরার আশা তৈরি হলেও ‘পেনাল্টি মাস্টার’ খ্যাত হ্যারি কেইনের শট পোস্টের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। সেই সাথে উবে গেলো ইংলিশদের ফুটবলকে ঘরে ফেরানোর স্বপ্ন। নিষ্ঠার সাথে বছরের পর বছর ‘ইটস কামিং হোম’ স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ ফ্যানরা। ফলে তাদের জ্বালাটাও যেন বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ট্রল করেই অনেকে শোকের প্রশমন ঘটাচ্ছেন। কিন্তু, এই সময়েও খেলোয়াড়রা পাশে পেলেন কোচকে। ভক্তদের ট্রলের জবাবে ম্যাচ শেষে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের গলায় শোনা গেলো হ্যারি কেইনসহ পুরো দলের বন্দনা।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট বলেন, ছেলেরা অবশ্যই তুলনামূলকভাবে ভালো খেলেছে। কিন্তু, ফুটবল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয় গোলে। আর, আমার খেলোয়াড়দের পক্ষে এরচেয়ে বেশি দেয়া সম্ভব ছিলো বলে আমার মনে হয় না। সবচেয়ে ভালো দলটির বিরুদ্ধে ছেলেরা অবশ্যই তাদের সেরা পারফরমেন্সই করেছে। দু’দলের জয়-পরাজয় আর পারফরমেন্সের পার্থক্য এক্ষেত্রে খুব সামান্য হলেও পুরো টুর্নামেন্টে একটা দল হিসেবে ছেলেরা যে দৃঢ় মানসিকতা দেখিয়েছে সেটি অতুলনীয়। খেয়াল করলেই দেখবেন যে, বিগ মোমেন্টগুলোয় আমরা কিন্তু জায়গামতোই উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু, ফুটবলে ভালো আর খারাপের পার্থক্য খুব সামান্যই থাকে।
রেফারির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে সাউথগেট বলেন, এটা নিয়ে আমার কথা বলা একদমই বেমানান। আমি বরং আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা বলতে চাই। ফ্রান্সকে অভিনন্দন। তারা এ টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা পারফরমেন্স করে এসেছে। আমরা তাদের মতো একটা সেরা দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছি, এটা দারুণ ব্যাপার।
হ্যারি কেইনের পেনাল্টি মিসের প্রসঙ্গে সাউথগেট বলেন, দেখুন আমরা একটা দল হিসেবে খেলি। জিতলে দল হিসেবেই জিতি, আর হারলে হারটাও আমাদের সবার। আমরা দুটো গোল খেয়েছি, নিশ্চিত গোল দেয়ার বেশকটি সুযোগ আমরা মিসও করেছি। হ্যারি পুরো ম্যাচে দারুণ খেলেছে, আর এরকম মুহূর্তে ওকেই আমরা ভরসা করি। ও আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। এমনকি আমাদের এ পর্যন্ত আসার পেছনেও ওর ভূমিকা অনেক।
নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলো না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাউথগেট বলেন, আমরা টুর্নামেন্ট জিততেই এখানে এসেছিলাম। আমাদের সে বিশ্বাসটা ছিল। আজ রাতে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সাথে খেলে আমরা বুঝিয়েও দিয়েছি যে আমরা জিততে পারতাম।
ইংল্যান্ড দলের কোচ হিসেবে থাকছেন কী না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাউথগেট বলেন, প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টের পরই আমরা আমাদের পারফরমেন্সের রিভিউ করি। প্রয়োজনে নিজেদের ভুল ধরি এবং তা শোধরাই। ২০২৪ এর ইউরো পর্যন্ত আমরা চুক্তিবদ্ধ। তবে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নিশ্চয়ই আমাদের সময় নেয়া উচিত।
সাউথগেটের কথার পুনরাবৃত্তিই যেনো শোনা গেলো মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসনের গলায়ও। ম্যাচ শেষে দেয়া সাক্ষাৎকারে হেন্ডারসন বলেন, কেমন লাগছে তা ম্যাচের ঠিক পরের মুহূর্তে আসলে বলা কঠিন। মনের অবস্থা প্রকাশ করার সঠিক শব্দ পাচ্ছি না এ মুহূর্তে। ১-০ তে পিছিয়ে পড়াটা অবশ্যই হতাশাজনক ছিল, তবে ভাগ্যক্রমে আমরা সমতা ফেরাতে পেরেছিলাম। কিন্তু, এই রাতটা আসলে আমাদের না।
সতীর্থ কেইনের পাশে দাঁড়ালেন হেন্ডারসনও। বললেন, দেখুন এর আগে নেয়া অসংখ্য পেনাল্টিতে গোল দিয়েছে হ্যারি। এমনকি আজকের প্রথম গোলটাও ওর পেনাল্টি থেকেই পেয়েছি আমরা। এ বিশ্বকাপেও ও আমাদের জন্য গোল করেছে। আমাদের এ পর্যন্ত আসার পেছনে ওর পারফরমেন্সের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো সুযোগই নেই। আজকে যা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। আমি জানি হ্যারি এটা সামলে নেবে, হয়তো সময় লাগবে। ও আমাদের অধিকার অধিনায়ক এবং আমাদের সেরা স্ট্রাইকার। ওকে ছাড়া আমরা এতোদূর আসতে পারতাম না।
তবে হেন্ডারসন মনে করেন পেনাল্টি মিস হওয়ায় ম্যাচটি হাতছাড়া হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও, হ্যাঁ। এ গোলটি হলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারতো। আমরা আজকে জয়ের জন্যই নেমেছিলাম কিন্তু, এই রাত আসলে আমাদের ছিল না। এর জন্য ফ্রান্সকে ক্রেডিট দিতেই হয়। ওরা অনেক ভালো খেলেছে।
/এসএইচ
Leave a reply