বায়ু দূষণে ঢাকার ‘ভয়ঙ্কর ডিসেম্বর’ চলছে। গেলো সাত বছরের কোনো ডিসেম্বরেই ভালো বায়ু সেবনের সুযোগ হয়নি রাজধানীবাসীর। চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনের সাতদিনই বাতাস ছিলো অস্বাস্থ্যকর। আর বাকি ছ’দিন- অতিমাত্রায় অস্বাস্থ্যকর। বাতাস এতটাই ধুলাময় যে প্রতিদিন রাজধানীর গাছের পাতায় জমছে ১১২টি হাতির ওজন অর্থাৎ প্রায় ৪৫০ মেট্রিকটন সমপরিমাণ ধুলাবালি। স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র, ক্যাপস-এর গবেষণায় উঠে এসেছে বিষাক্ত বাতাসের এমন তথ্য।
রাজধানীজুড়েই এমন ধুলার রাজত্ব। সবুজ পাতা হারিয়েছে রং। এ যেন বিষাক্ত ধোঁয়া-ধুলার আঘাতে বৃক্ষদের আহাজারি। ক্যাপস এর একটি গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ঢাকার গাছের পাতায় জমছে ৪৫০ মেট্রিক টন বা সাড়ে চার লাখ কেজি ধুলা। একটি হাতির গড় ওজন যদি চার টন হয়, সে হিসেবে প্রতিদিন ১১২টি হাতির ওজনের সমান ধুলা শুধু পাতার ওপরেই জমছে। এ থেকেই অনুমেয় নিশ্বাসের সাথে কত শত টন ধুলা আপনার আমার ফুসফুসে ঢোকে।
পাতায় এমন ধুলা জমে থাকায় গাছের অক্সিজেন উৎপাদন কমছে ২০ শতাংশ। রাজধানীর বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা এতটাই কম যে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা।
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ এই ধুলা। বিশ্বব্যাংক বলছে, গেলো পাঁচ বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে ২২ জন শিশুর মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী বায়ু দূষণ।
এসএসএমসি ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে অনেকেই শ্বাসকষ্টজনিত নানা সমস্যা নিয়ে আসেন। শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ও ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী এই ধুলা। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কম হয়ে যদি কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে শিশুদের গ্রোথ ঠিক মতো হয় না। বুদ্ধির বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয়।
ঢাকার বাতাসে এত ধুলার অন্যতম প্রধান কারণ নির্মাণকাজ। যখন তখন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি আর বছরের পর বছর এলোমেলো উন্নয়ন যন্ত্রণা বিষাক্ত করছে বায়ু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভয়ঙ্কর ডিসেম্বর থেকে বাঁচতে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, একই সিজনে একই রাস্তা বারবার খোঁড়া হচ্ছে। সমন্বয়ের অভাবে আমরা বায়ু দূষণকে কমাতে পারছি না।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে দূষণ এখন গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়েও দেড়শ ভাগ বেশি খারাপ। বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজুয়াল রেটিংয়ে বিশ্বের দূষিত শহর হিসেবে ঢাকা এক নম্বর হয় প্রায়ই।
এটিএম/
Leave a reply