অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। অনাহারে, অর্ধাহারে দিন যাপন করছেন দেশটির লাখ লাখ মানুষ। এমনকি, অভাবের কারণে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে স্কুল থেকে ঝরে পড়া অনেক শিশু। তৈরি হয়েছে পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিও। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও উন্নতি হচ্ছে না পরিস্থিতির। খবর কলম্বো টাইমসের।
স্কুলে গেলে মিলবে এক টুকরো মাংস, একটি ডিমের সাথে একপ্লেট ভাত- খাবারের তাগিদে ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু এলাকায়।
চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় মানবিক সংকটে শ্রীলঙ্কানরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয়েছে শিশুরা। বাধ্য হয়েই সন্তানদের কাজে পাঠাচ্ছেন বাবা-মায়েরা। ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে বহু শিক্ষার্থী।
শ্রীলঙ্কায় কর্মরত সমাজকর্মী মাইকেল ডেভিড এ প্রসঙ্গে বলেন, সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে বাধ্য হয়েই কাজে পাঠাচ্ছেন বাবা-মায়েরা। যাতে নিজেদের খাবার নিজেরাই যোগাড় করতে পারে। এসব শিশুদের স্কুলে আনার জন্য খাবারের একটি প্যাকেজ সরবরাহ করা হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামে, খেয়ে না খেয়ে দিনপাত করছেন দেশটির বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষ বলছে, বাধ্য হয়ে এক বেলা না খেয়ে বা আধা পেট খেয়ে দিনপাত করছে দেশটির ৭০ শতাংশ পরিবার। মিলছে না পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারও। ফলে পুষ্টিহীনতায় ভোগার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষের।
কলম্বোর এক বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন তিন বেলার বদলে দুই বেলা খাই। কতোদিন যে মাছ, মাংস খাই না তার হিসাব নেই। এমনকি বাচ্চাগুলোকেও পুষ্টিকর খাবার দিতে পারি না। আগে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন মাছ-মাংস খেতাম। আর, এখন দাম এতো বেশি যে মাসে একবারও সম্ভব হয় না।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিকে পুনরায় সচল করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটির সরকার। আর্থিক সংকটের জেরে বন্ধের উপক্রম পর্যটন খাতকে ফের চাঙ্গা করতে চালানো হচ্ছে জোর প্রচেষ্টা।
শ্রীলঙ্কান ট্যুরিজম প্রমোশন বোর্ডের চেয়ারম্যান চালাকা গাজাবাহু এ প্রসঙ্গে বলেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে পর্যটনের একটি বিশাল অবদান রয়েছে। পর্যটকরা আসলে তাৎক্ষণিক একটা পরিবর্তন দেখতে পাবো। তার জন্য একটা পর্যটন খাতকে আবার নতুন করে চালু করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরু থেকেই চরম অর্থনৈতিক সংকটের কারণে, শ্রীলঙ্কায় বন্ধ হয়ে যায় তেল, গ্যাস, খাদ্য এমনকি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ আমদানি। অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে কয়েকগুন। এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে না পারায় নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে দেশটি।
/এসএইচ
Leave a reply