চরম সংকটে পড়েছে দেশি মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্প। উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। নতুন করে আর বিনিয়োগে যেতে চান না এ খাতের উদ্যোক্তারা। চোরাইপথে আসা মোবাইলের অবাধ বাজারজাতের সুযোগে এ সংকটাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। তাদের অভিমত, এনইআইআর প্রকল্পের যথাযথ কার্যকারিতা নেই। ফলে বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেট, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশের বাজারে প্রবেশ করছে।
আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে যখন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড নিয়ে রফতানি বাজারে প্রবেশের অপেক্ষা, ঠিক তখনই মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্পে অশনি সংকেত। ধস নেমেছে বেচা-কেনায়। উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। উদ্যোক্তারা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের বড় ধা্ক্কা লেগেছে এ খাতে। অন্যদিকে, দেশের বাজারে চোরাই হ্যান্ডসেটের অবাধ বাজারজাতের সুযোগ, এ শিল্পের বিনিয়োগকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ট্রানশান হোল্ডিংস লিমিটেড (টেকনো) এর সিইও রেজোয়ানুল হক বলেন, এই মুহূর্তে হ্যান্ডসেট বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েহচে অবৈধ চালান থেকে তৈরি হওয়া যে মার্কেট সেটি। আগে ধরুণ তাদের দখলে ছিল বাজারের ৩০ শতাংশ সেটি এখন দাঁড়িয়েছেন ৫০ শতাংশে। কারণ, যারা অবৈধ পথে প্রোডাক্টটি আনছে তাদেরকে তো আর কোনো এলসি খুলতে হচ্ছে না। এলসির মাধ্যমে প্রোডাক্ট আনতে যে পরিমাণ কষ্ট করতে হচ্ছে; তাদেরকে দেখবেন অন্যদের থেকে এগিয়ে আছে। এটা তাদের জন্য অনেকটাই সহজ।
চোরাকারবারীদের দাপট কমাতে গত বছরের মাঝামাঝি ‘ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার বা এনইআইআর কার্যকম চালু করে বিটিআরসি। সেসময়, অবৈধ কারবারীদের বাজার সংকুচিত হয়ে ৫, শতাংশের নীচে নেমে আসে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অল্প কদিনের মধ্যে এনইআইআর এর মাধ্যমে, অবৈধ পথে আসা হ্যান্ডসেট বন্ধের কার্যক্রম থেকে সরে আসে সরকার।
এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, যে কাজের জন্য এনইআই তৈরি করা হয়নি সে কাজের জন্য এনইআইকে দায়ী করা যাবে না। স্মাগলিং যদি হয় তাহলে স্মাগলিং ঠেকানোর দায়িত্ব রাজস্ব বিভাগের। তারা স্মাগলিং কীভাবে ঠেকাবে অথবা ঠেকাবে না সেটা তাদের দায়িত্ব।
দেশে প্রতি বছর হ্যান্ডসেটের বাজার প্রায় বারো হাজার কোটি টাকার। খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, বর্তমানে এ বাজারের অর্ধেকটাই চলে গেছে চোরাকারবারীদের দখলে। শিল্প সুরক্ষায় যথাযথ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ না থাকায়, নতুন করে আর বিনিয়োগে যেতে চান না উদ্যোক্তারা।
প্রসঙ্গত, চোরাকারকারীরা ৪০-৫০ শতাংশ বাজার দখলে নেয়ায়, এখন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেট শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বাজারে প্রবেশ করছে। এতে প্রতি বছর রাজস্ব ক্ষতি প্রায় দু হাজার কোটি টাকা।
/এসএইচ
Leave a reply