সবুজ মাঠের রাজ্যে অনন্য এক রাজা পেলে। যিনি তার ফুটবলশৈলীতে পুরো বিশ্বকে গাঁথেন এক সুতোয়। নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সেখানে খেলেছেন প্রীতি ম্যাচে। ক্ষণিকের আনন্দে স্টেডিয়ামে ভাসিয়েছিলেন ২৫ হাজার দর্শককে। পেলের আগমনে আসে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি।
অনেক ফুটবল বোদ্ধারা মনে করেন, ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে। তার অর্জনের ঝুলিতে আছে এমন সব সাফল্য যা হার মানায় বিশ্বের সকল যুক্তি-তর্ক’কে। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে আছেন তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী হয়ে।
ষাটের দশকে তখন সান্তোস এফসি’র হয়ে মাঠ কাপাচ্ছিলেন পেলে। বিশ্বের নামি-দামি ক্লাবগুলোর তখন একটি এই ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি। টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়নশিপসহ দু’টি করে কোপা লিবার্তোদোরেস ও ইন্টার কন্টিনেন্টাল টুর্নামেন্ট জিতে সফলতার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে সান্তোস। এরপরই ক্লাবটি সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব সফরে বের হওয়ার। ধারাবাহিক অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালে আফ্রিকা সফরে বের হয় ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি।
দুই বছর আগেই গৃহযুদ্ধের কারণে টালমাটাল অবস্থা নাইজেরিয়ার। দেশটির পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদের লক্ষ্যে বায়াফ্রা রাষ্ট্র গঠন করে। এই যুদ্ধে ২০ লাখের বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। ঘরছাড়া হয় প্রায় ৪৫ লাখ নাইজেরিয়ান জনগণ। এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতেই প্রীতি ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় সান্তোস।
১৯৬৯ সালের ২৬ জানুয়ারি। ভয়, শঙ্কা আর উদ্বেগের ডালপালা প্রসারিত হচ্ছিল সর্বত্র। যদিও পেলে ও তার ক্লাব দেশটিতে পা রাখার পরই বন্ধ হয় অস্ত্রের ঝনঝনানি। অবশেষে লাগোসে সব উৎকণ্ঠাকে দূরে ঠেলে উপস্থিত হয় প্রায় ২৫ হাজার দর্শক। বলা বাহুল্য শুধুমাত্র একটিবারের জন্য ফুটবলের কালোমানিককে চোখের দেখা দেখতে জড়ো হয় মানুষ।
প্রীতি ম্যাচে পেলের জোড়া গোলে নাইজেরিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারায় সান্তোস। নিজেদের দল হেরে গেলেও দর্শকরা ফুটবলের জয় দেখেছিল সেদিন। এমন ভয়াল ও উৎকণ্ঠার মাঝেও নাইজেরিয়ার মানুষ কিছুটা সময়ের জন্য ছিল স্বস্তিতে। সরকারি দল ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। স্থানীয়ভাবে ঘোষণা করা হয় ছুটির। ফুটবলপ্রেমীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে খুলে দেয়া হয় বেনিনের সাথে বায়াফ্রার সংযোগ সড়ক।
কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠাতেই নয় বিশ্ব আর্তমানবতার সেবায়ও নিজেকে নিবেদিত করেছেন পেলে। শুভেচ্ছা দূত হয়েছিলেন ইউনিসেফের। পাশাপাশি দ্য পেলে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের করেছেন সেবা। দারিদ্র্যতা দূরীকরণসহ লেখা-পড়ার প্রতি জোর দেন এই ফুটবল কিংবদন্তি।
/আরআইএম
Leave a reply