প্রতিযোগিতার অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণের বাইরেও ফুটবলকে বলা হয় সুন্দর খেলা। বিশ্বকাপ ফুটবলের মর্যাদাকে তুলে ধরতে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’র বিশেষণ হয় ব্যবহৃত। শ্রেণি-পেশা-বয়স-সীমানা অতিক্রম করে এই অনিন্দ্য সুন্দর খেলার মাধুর্য উপভোগ করে সবাই। কারণ, মানবীয় আবেগের সবগুলো মাত্রাকে যে ফুটবলের মতো করে উপস্থাপন করতে পারে না আর কিছুই! সেই ফুটবলের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে ছিলেন এক ‘কালো ছেলে’; বৈশ্বিক সুপারস্টার হিসেবে যিনি ফুটবলকেই নিয়ে গিয়েছিলেন অত্যাশ্চর্য উচ্চতায়। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তারচিসিও বারনিচ যাকে নিয়ে বলেন, ম্যাচের আগে ভেবেছিলাম আর দশজনের মতোই সে রক্ত-মাংসের মানুষ। কিন্তু ম্যাচের পর দেখলাম, সেই ভাবনাটাই ভুল।
এমন অনেক ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করতে, শারীরিক দক্ষতার সীমাকে আর দশজনের কল্পনার বাইরে নিয়ে যেতে কিংবা, ফুটবল খেলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির চেয়েও ঢের বেশি ভালোবাসা ও পরিচিতি পাওয়ার ঘটনাকে মর্ত্যবাসীর কাছে বাস্তব করে তোলার মতো অচিন্ত্যনীয় সব কাণ্ডের জন্যই তিনি রাজা। তিনি পেলে। মারাকানায় যিনি পেনাল্টি নেয়ার জন্য দাঁড়ালে লাখখানেক দর্শকের উপস্থিতিতেও তৈরি হতো পিনপতন নীরবতা। যখনই বল জড়িয়ে গেলো জালে, সবার বয়স কমে গেল এক ঝটকায়! শিশুর মতো আনন্দে উদ্বাহু নৃত্য আর বাতাসে চালানো একের পর এক ঘুষিতে উচ্ছ্বাস উদযাপন; মুহূর্তেই শিশুর মতো উল্লাসে মেতে উঠতো ফুটবল পাগল দর্শক থেকে শুরু করে জীবনে পোড় খাওয়া হাজারো মানুষ- মুক্তি ও উল্লাসের আনন্দ উপভোগ করতে তারা এই অতি মানবের খেলা দেখতে ভিড় করতো; যখন পেলের পায়ে বলও ছোটে শিশুর আনন্দে।
বিশ্বনেতা থেকে শুরু করে বরেণ্য শিল্পী- ফুটবলের রাজা পেলের স্তুতি বর্ণনা করতে কমতি পড়েনি কারও। পেলে কেবল ফুটবলার ছিলেন না; ফুটবল পায়ে সবুজ ঘাসে শিল্পীর পরশ বুলিয়ে মায়াবী সৌন্দর্যের হুকুমে যিনি শাসন করতেন বিশ্ব। নিপীড়িত বিশ্বের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষায়, শিশুর আনন্দ ও পুরুষের পৌরুষ একইসাথে প্রত্যক্ষ করতে চাইলে পেলের খেলা দেখো।
কাতার বিশ্বকাপের ডামাডোলে একটি ভিডিও ছড়িয়ে গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আধুনিক ফুটবল গ্রেটদের বল নিয়ে নানা কারিকুরির সাথে প্রতি ক্ষেত্রেই রাখা হয়েছে পেলের ক্লিপ। মেসির ড্রিবলিং, ক্রুইফ টার্ন, জিদানের ৩৬০ ডিগ্রিতে বলের নিয়ন্ত্রণ কিংবা য়্যুভেন্টাসের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোল- এর সবই যে এই প্রজন্মের জন্মের বহু আগেই করে গেছেন পেলে! গ্রেটদের তাই সৃষ্টিশীলতা ও কল্পনাশক্তির শেষপ্রান্তে বারবার ঠেলে দিয়েছেন এডসন আরান্তেস ডি নাসিমেন্তো ‘পেলে’। আমেরিকান পপ মুভমেন্টের অন্যতম ব্যক্তিত্ব অ্যান্ডি ওয়ারহল যেমন বলেছেন, পেলে এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি আমার সূত্র ভুল প্রমাণ করেছেন। ১৫ মিনিটের তারকাখ্যাতিকে পায়ে মাড়িয়ে যিনি বেছে নিয়েছেন ১৫ শতাব্দীর জীবন।
আরও পড়ুন: পেলে-ম্যারাডোনা ফুটবল খেলবেন ওই দূর আকাশে!
/এম ই
Leave a reply