দেশে-দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার বছর ২০২২

|

যুদ্ধ, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, ভৌগলিক মেরুকরণের মতো নানা ঘটনার সাক্ষী ২০২২ সালের বিশ্ব রাজনীতি। ঘটনার এসব বাঁক পরিবর্তন নতুন রূপ দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে। একদিকে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন বিভাজিত করেছে বৈশ্বিক ঐক্যকে, অন্যদিকে অর্থ ও জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। দেউলিয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা; রাজনীতির টানাপোড়েনে সরকারের পতন হয়েছে পাকিস্তান-ব্রিটেনে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের ঘটনাবহুল এক অধ্যায়ের অবসানও হয়েছে এ বছরই। নানা সময় করোনা আর মাঙ্কিপক্সের বিস্তার আর বছরের মাঝামাঝি ইরানের বিক্ষোভ তুলেছে আলোড়ন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের এমন ভয়াবহ রূপ বোধহয় আর দেখেনি বিশ্ব। সামরিক জোট ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের সদস্য হওয়াকে কেন্দ্র করে মস্কো-কিয়েভ বিবাদ রূপ নেয় যুদ্ধে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ করে পরমাণু শক্তিধর রাশিয়া। একদিকে হাজারো মানুষের মৃত্যু, অন্যদিকে বাস্তচ্যুত লাখ লাখ মানুষ সৃষ্টি করেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শস্য এবং গ্যাস সরবরাহকারী দেশ দুটির মধ্যে সৃষ্ট যুদ্ধে দেখা দেয় ভয়াবহ খাদ্য সংকট। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোও বিপাকে পড়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তারচেয়েও বড় সংকট সৃষ্টি হয় জ্বালানি নিয়ে। গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করা ইউরোপ, জ্বালানি সংকটে পড়ে বাধ্য হচ্ছে কাঠ ব্যবহারে।

২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ ছাড়ায়। বৈশ্বিক এ অর্থনৈতিক সংকট বহু দেশেই তৈরি করে রাজনৈতিক সহিংসতা।

২০২২ ছিলো দেশে দেশে রাজনৈতিক সংকট আর সহিংসতার বছর। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদূরদর্শী নীতি শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে। পদত্যাগে বাধ্য হয় পুরো মন্ত্রিসভা।

নাটকীয়তা চলে পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়েও। পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। অবশ্য ক্ষমতা হারিয়ে চুপ থাকেননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ডাক দেন লংমার্চের। সমাবেশ চলাকালে হামলায় গুলিবিদ্ধও হন তিনি।

তবে ব্রিটিশ রাজনীতির নাটকীয়তা যেনো হার মানায় সব কিছুকেই। মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে ৩ জন প্রধানমন্ত্রী দেখে ব্রিটেন। বরিস জনসন পদত্যাগের পর তার স্থলাভিষিক্ত জন লিজ ট্রাস। মাত্র ৪৫ দিন টিকেছিলেন, তিনি যা ইতিহাসের যেকোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ততম মেয়াদ। এরপর লিজের স্থলাভিষিক্ত হন ব্রিটেনের ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর মধ্যে দেয়ে অবসান হয় আরেক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের। সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পর ৯৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি। রানির মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ পুত্র তৃতীয় চার্লস ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হন।

বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলো করোনা এবং মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভুাব। এর পাশাপাশি স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরকে ঘিরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা এবং ইরানের বিক্ষোভও ছিলো আলোচনায়।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply