ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের ঘৃণা বা বিদ্বেষজনিত অপরাধে (Hate Crime) শিকার হয়ে ভারতে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে অন্তত ৪২ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নিহত হওয়া এসব মানুষের প্রায় সবাই মুসলিম ও দলিত। সম্প্রতি ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া’ এর এক রিপোর্টে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিদ্বেষজনিত অপরাধের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। দুই এবং তিন নম্বর স্থানেও রয়েছে বিজেপি শাসিত আরও দুই রাজ্য, গুজরাট এবং রাজস্থান।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টির ভারতীয় শাখার তৈরি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে বিদ্বেষজনিত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে ১০০টি। এর মধ্যে ৬৭টি ঘটনার শিকার দলিতরা এবং ২২টির শিকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা। আক্রান্তদের মধ্যে আছেন রূপান্তরকামীরাও।
সবচেয়ে বেশি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্য যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সেখানে ১৮টা বিদ্বেষজনিত অপরাধ ঘটেছে। এর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটও। সেখানে ঘৃণা বা বিদ্বেষজনিত হিংসা ঘটেছে ১৩টি। তৃতীয় স্থানে রাজস্থান, ৮টি। তামিলনাড়ু ও বিহারে ৭টি করে।
২০১৫-র দাদরিকাণ্ডের পর থেকেই ধর্ম-বর্ণভিত্তিক হিংসার ঘটনার রেকর্ড রাখতে শুরু করে অ্যামনেস্টির ভারতীয় শাখা সংগঠন। ওই বছর উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গো-রক্ষকদের হামলার মুখে মৃত্যু হয় মহম্মদ আখলাকের। বাড়ির ফ্রিজে গোমাংস রাখা আছে, এই গুজবে আখলাককে পিটিয়ে খুন করে এক দল স্বঘোষিত গো-রক্ষক। অ্যামনেস্টির ‘হল্ট দ্য হেট’ ওয়েবসাইট-এর দাবি, আখলাক-কাণ্ডের পর থেকে এ দেশে ৬০৩ জন এ ধরনের অপরাধের শিকার হয়েছেন।
অ্যামনেস্টির আরও দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গো-রক্ষার নামে হিংসার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বা পারিবারিক সম্মান বাঁচাতে খুনের মতো অপরাধ করা হয়েছে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতেই এই ধরণের প্রবণতা বেশি। মেরঠ, মুজফ্ফরপুর, সাহরনপুর বা বুলন্দশহরে হিংসার জেরে এ রকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
ভারতে হিংসার এই প্রবণতাকে বিশ্লেষণ করে নিজস্ব মতামত দিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আকর পটেল। তার মতে, “ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের ঘৃণা বা বিদ্বেষজনিত অপরাধ (হেট ক্রাইম)এর জেরে অপরাধের সঙ্গে অন্য অপরাধের একটা মূলগত তফাত রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের পিছনে মূলত বৈষম্যমূলক মনোভাব লুকিয়ে থাকে।” কী ভাবে মুক্তি মিলতে পারে এর থেকে?
এ প্রসঙ্গে তার পরামর্শ, “পুলিশের উচিত তদন্তের সময় যে কোনও ধরনের সম্ভাব্য বৈষম্যমূলক উদ্দেশ্যকে খুঁজে বের করা এবং তা রেকর্ড করা।”
(সূত্র: আনন্দবাজার, অ্যামনেস্টি ইন্টারনেশনাল)
Leave a reply