স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা না থাকায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নেই সন্তুষ্ট নীতি নির্ধারকরা। যে কারণে ক্রমেই উচ্চমূল্যের বেসরকারি সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা।
এমন একজন ব্যক্তি মোদাচ্ছির হোসেন। তার বয়স সত্তর পেরিয়েছে। হঠাৎ পেটে ব্যথা থেকে ভয়ানক রোগের শুরু। কয়েক দফা চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে জানা গেলো, ক্যান্সারের শঙ্কা রয়েছে তার। তাই পরীক্ষার জন্য ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন গেলো ১১ ডিসেম্বর। সেখান থেকে বলা হয়, জানুয়ারির ৫ তারিখ রোগীকে আসতে হবে। পরবর্তীতে আবার বলা হয়, আগে বলা সেই তারিখেরও ১৫ দিন পরে এসে রিপোর্টের খোঁজ করতে হবে। রোগীর আত্মীয়দের কাছে তাই এই চিকিৎসার কোনো মূল্য নেই; যেখানে টেস্ট ও রিপোর্ট করতেই চলে যায় দেড় মাস!
জানা যাক আরেকটি ভোগান্তির ঘটনা। দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকে শরীরে রোগ পুষতে চাননি আফরোজার পরিবার। বাধ্য হয়েছেন বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে। তবে তার আগেই ভুল চিকিৎসার শিকার হন তিনি। খরচ হয়ে গেছে কয়েক লাখ টাকা।
ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের তথ্য বলছে, চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত খরচ ৬৯ শতাংশ; যা আগের তুলনায় বেশি। সরকারি ব্যয় মাত্র ২৩ শতাংশ। দিনে দিনে বেড়েছে বেসরকারি চিকিৎসালয়ের আধিপত্য।
বিএনএইচসিএ’র স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. সুব্রত পাল জানান, এই পরিস্থিতি সৃষ্টির মূল কারণ হচ্ছে অপেক্ষা, যা অনেক বেশি। প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে হয়তো তারা একই সময়ে একই প্রফেসরকে দেখাতে পারেন, দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া যায়। বেসরকারি হাসপাতাল যে মূল্য নেয় বা প্রকাশ করে, তা নিয়ন্ত্রণের আরও সুযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, তৃণমূলে সেবা ছড়িয়ে দিতে না পারায় স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা আসেনি। যেকোনো রোগ নিয়ে হয়রানি ও দালালের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, প্রথমেই প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার পর্যায়টিকে শক্তিশালী করতে হবে। জেলা, উপজেলা ও প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা এখন প্রত্যাশিত মাত্রায় কার্যকর নয়। সেগুলো সবার আগে কার্যকর করতে হবে।
সেই সাথে, স্বাস্থ্য বাজেটের খরচেও সেবার পরিবর্তে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেশি গুরুত্ব পায় বলে অভিযোগ করেন অধ্যাপক আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, আমরা হাসপাতাল বানাচ্ছি। যন্ত্রপাতি কিনছি। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দিচ্ছি। কিন্তু এই সমস্ত আয়োজন যে জন্য, রোগী যে সেবা পাবে- সেদিকেই কারও খেয়াল নেই।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য খাতে এবার বাজেট ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার আটশো কোটি টাকা; যা আগের বছরের তুলনায় চার হাজার কোটি টাকা বেশি।
/এম ই
Leave a reply