প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না রাষ্ট্রীয় বিমান, আস্থা হারাচ্ছে যাত্রীদের

|

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়েব সাইট থেকে নেয়া ছবি।

ব্র্যান্ড নিউ অত্যাধুনিক বোয়িংসহ বহরে পর্যাপ্ত উড়োজাহাজ ও দক্ষ জনবল ছাড়াও আছে নানা রকম সুবিধা। তারপরও আন্তর্জাতিক বাজারে বিদেশি এয়ারলাইন্সের সাথে প্রতিযোগিতায় তাল মেলাতে পারছে না রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। উল্টো হাজার হাজার কোটি টাকা দেনার দায় দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সেবার মানে পিছিয়ে পড়ায় আস্থা হারাচ্ছে যাত্রীদের। কিন্তু কেনো? বারবার চেষ্টা করেও কেনো ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি?

দেশের অভ্যন্তরে ছাড়াও ২০টি আর্ন্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিশাল সরকারী সংস্থা-বিমান। লোকসান কমিয়ে লাভজনক করতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করা হয় ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই। লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা, হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান আর নানা অব্যস্থাপনায় জর্জরিত রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় গত চার বছরে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয় চারবার।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) হাসান মাসুদ বলেন, একজন এমডি বা চেয়ারম্যানকে বিমানের এওসি প্রসিডিওর থেকে শুরু করে প্রকিওরমেন্ট প্রসিডিওর হয়ে এটা ম্যানেজমেন্ট এবং এর টিকেটিং সিস্টেম পর্যন্ত সবকিছু কীভাবে চালাতে হবে এটার সমস্ত কিছু জানতে হবে। যদি না জানে তাহলে শুধু নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে আর কিছু হবে না। একজন জয়েন্ট ও একজন অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি সাথে করে দুদিন পরপর এখানে সচিব সাহেব আসেন। উনি বিমানের কী বোঝেন? এভাবে কোনো রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাকে চালানো যায় না। এটা একটা লিমিটেড কোম্পানি, এটাকে লিমিটেড কোম্পানির মতো করেই চালানো উচিত। ওয়াসা, ওয়াপদা, পিডিবি বা ডেসকোর মতো করে এটিকে চালানো যাবে না।

সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর (অব.) ইকবাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ৬ মাস বা একবছর পরপর পরিচালনা পরিষদে পরিবর্তন করা হয়। তারাই বা শিখবেন কীভাবে? তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নাই। তারা আসেন এমনভাবে যে তারা মাসে তিন লাখ টাকা স্যালারি তোলেন, ফ্রি টিকেটে ঘোরেন, ব্যস। কিন্তু, তাদের যদি জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে দৃশ্য এরকম হতো না। আপনাদের উচিত এটাকে পুরোপুরি পাবলিক অথবা পুরোপুরি সরকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। আপনারা এখনও কোম্পানিকে শেয়ারে দিয়ে রেখেছেন কিন্তু মার্কেটে তো কোনো শেয়ার নাই। কারো কাছে জবাবদিহিতা নাই। এই যে, বিমানের একজন সিইও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে, মাসে ৩-৪ লাখ টাকা বেতন নিয়ে চলে গেলেন- তার কী বিচার হচ্ছে? এটা কে খেয়াল রাখবে?

গেলো বছর কানাডার টরোন্টয় বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করে বিমান। এছাড়াও গুয়াংজু, শারজাহসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইট চালাচ্ছে সংস্থাটি। তবে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবের কারণে জনপ্রিয় রুটগুলোর বাজার ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্টীয় সংস্থাটি।

সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর (অব.) ইকবাল হোসেন বলেন, অ্যামিরেটস যদি সপ্তাহে ২৩ থেকে ২৯টা পর্যন্ত ফ্লাইট করতে পারে তো আমরা মাত্র ৪টা ফ্লাইট নিয়ে ঝুলে আছি কেনো? জেদ্দায় আমরা কয়টা ফ্লাইট করতেছি? ইউএস এয়ারলাইন্সের ৮ বছর হয়েছে, তারা আরও একটা ইয়ার লাইন খুলেছে। তারা এ-৩৩০ আনতেছে। কেনো আনতেছে? কারণ, হজের মৌসুম আসছে আর এটা নিয়ে ওদের একটা লক্ষ্য আছে।

লাভজনক ব্যবসার অন্যতম শর্ত যাত্রীসেবা। সেটার দিক থেকেও চরমভাবে ব্যর্থ বিমান।

সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর (অব.) ইকবাল হোসেন আরও বলেন, রিসেন্টলি একজন আমাকে একটা ফ্লাইটের কথা বললো যে সে ১৬ ঘণ্টা বসে ছিল বিমানে কিন্তু ওয়াশরুমে যেতে পারেনি। ওয়াশরুম ব্যবহারি করা যাচ্ছিলো না। কারণ, সেখানে পানি জমে থাকে। কেউ পরিষ্কার করেনি। অপরদিকে আমি অ্যামিরেটসের ফ্লাইটে যান, সেখানকার ওয়াশরুম আপনি যতোবারই ব্যবহার করেন না কেনো পরেরবার অবশ্যই সেটি পরিষ্কার পাবেন।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) হাসান মাসুদ বলেন, জবাবদিহিতা নাই দেখেই তো এই অবস্থা। আপনি টিকিট কাটতে যান বিমানে দেখবেন যে টিকিট নাই। অথচ ফ্লাইট যাওয়ার সময় দেখবেন অর্ধেক বিমানই খালি।

এসব নানামুখি সমস্যা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করছেন নতুন দায়িত্ব নেয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিউল আজিম বলেন, বিমানকে কারো স্বার্থসিদ্ধির জায়গা হতে দিবো না। বিমানে কোনো ধরনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা বা দুর্নীতিকে সহ্য করা হবে না। বিমানের ভালো কর্মীদের পুরষ্কৃত করা হবে। বিমানের সাথে যারা ভালো করবেন তারাও পুরষ্কার পাবেন, আর যারা অন্যায় করবেন তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

আসছে হজ মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ও দুর্নীতি-অনিয়ম আর দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ঘোষণায় কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ-বিমান।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply