কাকলীর পাশে এমপি-র‌্যাব ডিজি, অসংখ্য পাঠকের সহায়তার আশ্বাস

|

প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, স্টাফ রিপোর্টার:

চলতি বছর এইচএসসিতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মধ্যে সেরা ফলাফল করা অতি দরিদ্র পরিবারের অদম্য মেধাবী কাকলী আক্তারের ভবিষ্যত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামীলীগ সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি।

লেখাপড়া চালিয়ে যেতে শিক্ষা অনুদান ছাড়াও কাকলীর ঘর সংস্কার, সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। সংসদ সদস্যর বোনও ঘোষণা দিয়েছেন অব্যাহত শিক্ষা বৃত্তি দেয়ার।

এদিকে র‌্যাব ডিজি বেনজির আহমেদের পক্ষ থেকে মাদারীপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক কাকলীর বাড়িতে এসে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়ে নগদ অর্থ, মিষ্টি ও নতুন পোশাক উপহার দিয়ে গেছেন। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনও বৃত্তির দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়াও দেশ বিদেশ থেকে যমুনা অনলাইনের অসংখ্য পাঠক কাকলীর ভবিষ্যত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তার পরিবার ও কলেজ অধ্যক্ষর সাথে যোগাযোগ করছেন। অদম্য মেধাবী কাকলী আক্তারকে নিয়ে যমুনা টিভির অনলাইনে শুক্রবার ‘মিলাদে পাওয়া একটি জিলাপি দিয়েই মেয়েকে মিষ্টিমুখ করালেন বাবা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।

জানা যায়, চলতি বছর এইচএসসির ফলাফলে জেলার শিবচর উপজেলার ৫টি কলেজের মধ্যে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ ৮৮.৫৯ ভাগ উত্তীর্ণ হয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে এবং উপজেলার একমাত্র গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করে ওই কলেজের মেধাবী ছাত্রী কাকলী আক্তার।

দফায় দফায় পদ্মা নদী ভাঙ্গন আক্রান্ত কাকলীর নিঃস্ব পরিবারটি উপজেলার পাচ্চরে টিনের একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস করে। ৫ ভাই বোনের সংসারে বাবা হারুন মাদবর দিনমজুর এবং মা তাসলিমা বেগম গৃহিনী। অন্যের জমিতে বাবা কাজ করে পাওয়া টাকা দিয়েই দিয়েই চলে সংসার।

ছোট সময় থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী কাকলী এসএসসিতে পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে  জিপিএ-৫ অর্জন করে। পরে ভর্তি ফি ছাড়াই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ কর্তৃপক্ষ কাকলীকে পড়ার সুযোগ দেয়। বেতনসহ কোনো ধরনের খরচ দিতে হয়নি কাকলীকে। যাতায়াতসহ বাকি খরচ চালাতে পাশের বাড়ির শিশুদের প্রাইভেট পড়াতেন কাকলী।

দিনমজুর বাবা খাবার জোগাতেই হিমশিম খাওয়ায় টাকার অভাবে কলেজের মাত্র ৪টি বই কিনতে পারে কাকলী। অন্যের পুরাতন বই ধার করে পড়তে হয়েছে তাকে। খাতা ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় কম লিখতো কাকলী। দূরে কলেজে যাতায়াতের ভাড়া না থাকায় অনেকদিন ক্লাস মিস হতো। এতসবের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েও যখন গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পায় কাকলী, তখন মেয়েকে মিষ্টিমুখ করানোর জন্যও কোনো টাকা ছিলনা হারুন মাদবরের কাছে। তাই মসজিদের মিলাদে পাওয়া জিলাপি দিয়েই মেয়েকে মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন গত বুধবার।

কাকলীর জীবন সংগ্রাম নিয়ে শুক্রবার বিকেলে যমুনা টিভির অনলাইনে সংবাদটি প্রকাশের পরপরই পাঠকদের ব্যাপক সাড়া পড়ে। সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী কাকলীর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অব্যাহত শিক্ষা বৃত্তি প্রদান ছাড়াও তার জরাজীর্ন বাড়ি সংস্কার ও সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের নির্দেশ দেন স্থানীয় প্রশাসনকে।

সংসদ সদস্যর বোন শিক্ষা বৃত্তি আরো বাড়িয়ে দিয়ে ভাল জায়গায় লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অধ্যক্ষকে আশ্বস্ত করেন। আজ শনিবার দুপুরে র‌্যাব ডিজির পক্ষ থেকে বাড়িতে এসে ফুলের তোড়া দিয়ে কাকলীকে শুভেচ্ছা জানান র‌্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোঃ খালেদ মাহমুদ। এসময় নগদ ১০ হাজার টাকা, মিষ্টি ও নতুন পোশাক তুলে দেন কাকলীর হাতে।

এছাড়াও কাকলী ও অধ্যক্ষর মুঠোফোনে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পাঠক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, কাকলীকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা পরিষদ আগে থেকেই বৃত্তি দিয়ে আসছে। সংসদ সদস্য মহোদয় ওর আরো শিক্ষা বৃত্তি ছাড়াও বাড়ি সংস্কার, সৌর বিদ্যুতসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশ আমাদের দিয়েছেন। রবিবারই এগুলো বাস্তবায়ন হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply