প্রবীণদের সংখ্যা বাড়লেও আশঙ্কাজনকহারে কমছে জাপানে জনসংখ্যা। এমন পরিস্থিতি, দেশটির নীতিনির্ধারকদের ফেলেছে দুশ্চিন্তায়। তাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে ভেঙে পড়তে পারে জাপানের সমাজ ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে জন্মহার বৃদ্ধিতে, শিশু-সম্পর্কিত বাজেট দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। খবর সিএনএনের।
এর আগে, ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ ১২৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছিল জাপানের জনসংখ্যা। গবেষকদের পূর্বাভাস, চলতি শতকের শেষে দেশটিতে ৫৩ মিলিয়ন মানুষ কমে যাবে। অথচ এ মুহূর্তেই ১২৫ মিলিয়নের নিচে নেমেছে জাপানের জনসংখ্যা। গত বছর ৮ লাখ শিশুর জন্ম হয় দেশটিতে। ৭০ এর দশকে যা ছিল গড়ে ২০ লাখের ওপর। উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে বেড়েছে জাপানিদের গড় আয়ু। সবচেয়ে বেশি প্রবীণের দেশটিতে ২৮ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে। অন্যদিকে গেলো ১৪ বছর ধরে কমেই চলেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জীবনযাত্রা ও শিশু লালনপালনের উচ্চ ব্যয়ের কারণে দিনদিনই কমছে জাপানের সন্তান জন্মদানের প্রবণতা।
জাপানের জনসংখ্যা প্রসঙ্গে বিশ্লেষক শিবাজী দাস বলেন, শিশুদের লালনপালনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি জাপান। পার্শ্ববর্তী চীন, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের চেয়েও জাপানে সন্তান পালনের খরচ বেশি। জন্মহার কম হবার এটাও একটা কারণ। আরেকটি কারণ হলো চাকুরি ক্ষেত্রে নারীকর্মীরা ছুটি পান না। ফলে সন্তানকে দেয়ার মতো সময় তাদের খুবই কম থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি এমনকি সামাজিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ নিয়ে পার্লামেন্টে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। জোর দেন শিশুবান্ধব কর্মসূচি ও আর্থ-সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলার বিষয়ে। এপ্রিলেই এ বিষয়ক নতুন একটি সংস্থা খোলার কথাও জানান।
এক বিবৃতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, টেকসই ও সামগ্রিক আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির জন্য শিশুবান্ধব নীতি সবচেয়ে বেশি দরকার। আমাদের দেশ এমন একটি অব্স্থায় পৌঁছেছে, যেখানে সামাজিক ব্যবস্থা টিকবে কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। নষ্ট করার মতো সময় আমাদের আর নেই।
এর আগেও জনসংখ্যার হার বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হলেও সাফল্য পায়নি জাপান। অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, এ মুহূর্তে দেশটির কঠোর অভিবাসন আইনকে সহজ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, জাপানের প্রতিবেশী চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। ২০১০ থেকে ২০২০ -এক দশকে চীনের জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়াতেও বাড়ছে বৃদ্ধের সংখ্যা। দেশটিতে ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা এখন দেশটির মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ।
/এসএইচ
Leave a reply