রিমন রহমান:
বাড়ছে রফতানি আয়। আমদানির অংকটাও কম নয়। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন যতোই বড় হচ্ছে, ততই শঙ্কা বাড়ছে। এর কারণ, সামনে নির্বাচন। আর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাড়ে টাকা সরিয়ে ফেলার প্রবণতা। মূলত আমদানি-রফতানির আড়ালেই চলে যায় বেশিরভাগ টাকা।
এছাড়া, পুঁজিবাজার ও হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ নিয়ে যাওয়া হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, কতো টাকা কোন দেশে যাচ্ছে, তার সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই। নির্বাচন সামনে রেখে কঠোর নজরদারি দরকার। এক্ষেত্রে তদারকি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করা হচ্ছে। আবার পণ্য রফতানি করার সময় বিপরীত চিত্র। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হচ্ছে অর্থ।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি
মীর নাসির হোসেন বলেন, ট্রানজেকশন ভ্যালুতে যতদিন পর্যন্ত অ্যাসেসমেন্ট না আনা হচ্ছে এবং রেফারেন্স ভ্যালুতে আনতে গেলে এই সমস্যা থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম সবসময় একইরকম থাকে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ বলছে, উন্নয়নশীল ১৩৫ দেশের মধ্যে অর্থ পাচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। আর এ দেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে নির্বাচনের বছরে বাড়ে অর্থপাচারের প্রবণতা।
মীর নাসির হোসেন বললেন, নির্বাচনের বছরে টাকা বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে একটু উসকে দিতে পারে। তবে, প্রতিনিয়ত যদি টাকা বাইরে চলে যায়, এজন্য সরকারের কঠোর একটা উদ্যোগ দরকার। যেটির মাধ্যমে অর্থ পাচার কমিয়ে আনা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিএফআই বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার হয় ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে তিনটি কারণ সামনে এসেছে— তা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্নীতি। পাচার ঠেকাতে নির্বাচনের বছরে শক্ত তদারকি দরকার।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা অনেক ধরনের আইন, প্রতিষ্ঠান করেছি। যেটা খুবই ইতিবাচক। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। আমরা বিগত সময়ে দেখেছি, যারা অন্যায়ভাবে টাকা নিয়ে গেছে, তাদের সুযোগ দেয়াটা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না।
বলা হচ্ছে, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েস যেন না হয়, এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রত্যেকটি এলসি এখন মনিটরিং করছি।
জিএফআই প্রতিবেদন বলছে, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে হারে বাড়ে অর্থ পাচার। এরমধ্যে ২০১৮ এর একেবারে শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর ২০১৩ ছিল নির্বাচনের আগের বছর।
/এমএন
Leave a reply