আখলাকুস সাফা:
একজন কিডনি রোগীর চিকিৎসায় মাসে খরচ অন্তত ২০ হাজার টাকা। যারা ভর্তুকি পান না, তাদের খরচের পরিমাণ আরও ১৬ হাজার বেশি। ৮০ ভাগ রোগীরই চিকিৎসা চলে ভর্তুকি ছাড়া। খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বজনরা। আরও শঙ্কার কথা হচ্ছে, গেলো এক বছরে দেশে কিডনি রোগী ও মৃত্যুর হার বেড়েছে দ্বিগুণ! অনেকেই সামর্থ্য না থাকায় যেতে পারছেন না চিকিৎসা সেবা পেতে।
ডায়ালাইসিস খরচ আড়াই হাজার, ইঞ্জেকশন দেড় থেকে ৫ হাজার, তারপর বাধ্যতামূলক ওষুধের দাম ৫ হাজার পর্যন্ত। ১ জন রোগীর এ খরচ সপ্তাহে ২ বার। মাসে বেরিয়ে যাচ্ছে ৩০ হাজার টাকা! এ হিসেব বেসরকারি হাসপাতালের। আর, ৮০ ভাগ ডায়ালাইসিসই হচ্ছে এভাবে।
১৩ বছর ধরে নিজের চিকিৎসায় এ খরচটা টানছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। তার পেনশনের পুরো টাকা তো গেছেই, বিক্রি করতে হয়েছে পরিবারের সর্বস্ব। তিনি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার যেখানে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করছে, সেখানে এই সামান্য ভর্তুকি কি আমাদের দিতে পারে না? অনেক রোগী আছে যারা ৫০০ টাকাও দিতে পারে না।
সরকারি হাসপাতালে রোগীপ্রতি সপ্তাহে ভর্তুকি ৪ হাজার টাকা। নানান জটিলতা পেরিয়ে সুবিধাটা পাচ্ছে ২০ ভাগেরও কম রোগী। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো তেমন একজনের কথা। স্ত্রীর ডায়ালাইসিসে ৫ বছরে সঞ্চয়ের ১২ লাখ টাকা শেষ করে ৬ মাস হলো সরকারের ভর্তুকির শিডিউল পেয়েছেন এক অসহায় স্বামী। এখনও তার খরচ মাসে ২০ হাজার টাকার মতো। রাইড শেয়ার করে কোনোরকমে চিকিৎসাটা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
চোখ দেয়া যাক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে। ২০২১ এ কিডনি রোগী ছিল প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার। যা এক বছরে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজারের বেশি। খরচের চাপে চিকিৎসাই করাতে পারছে না অনেকে। মৃত্যুর সংখ্যাও ৫০০ থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চিকিৎসক ডা. শেখ মইনুল খোকন বলেন, প্রথমেই স্ক্রিনিং হচ্ছে, কিডনি বিকল হয়েছে কিনা। যদি স্টেজ ওয়ান বা স্টেজ টু’তে আমরা ধরতে পারি যে, কিডনি আক্রান্ত হচ্ছে; তবে কিডনি বিকল হওয়া রোধ করা যায়। সরকার যদি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টে ভর্তুকি দেয় তাহলে ভর্তুকির পরিমাণও কমে যাবে। কিন্তু ফলাফল হবে অনেক বেশি। যেমন, ওই রোগী তখন কর্মক্ষম হবে। তার জন্য পরিবারের কারও সময় দিতে হবে না। তাছাড়া, ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী ওষুধের খরচ হয়তো সেই রোগী নিজেই বহন করতে পারবে।
/এম ই
Leave a reply