মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার কার্যক্রম

|

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:

মালয়েশিয়ায় শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া চলবে পুরো বছর। এ প্রক্রিয়ায় যারা কালো তালিকাভুক্ত রয়েছেন তারা রিক্যালিব্রেশন বৈধতার প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারবেন না। ইমিগ্রেশন বিভাগের এক নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ১০ জানুয়ারি দেশটির মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ম্যানপাওয়ার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের (এমআরপি) জন্য বিশেষভাবে অবৈধ অভিবাসীদের রিক্যালিব্রেশন প্ল্যান ২.০ (আইআইআরপি) বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন এবং ওই দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল ঘোষণা দেন, অনথিভুক্ত বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করনের রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের। রিক্যালিব্রেশন কার্যক্রম চলতি বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

গত ১৮ জানুয়ারি দেশটির ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক দাতুক সেরি খায়রুল জাইমি দাউদ এক বিবৃতিতে ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে) ২.০’ অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধতার ঘোষণা দেন। ঘোষণার আলোকে ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) দেশটির নিয়োগকর্তারা ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে) ২.০’-এর মাধ্যমে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন শুরু করেছেন।
নিয়োগকর্তারা ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পাওয়ার আগে https://imigresen online.imi.gov.my/myimms/main- অনলাইনেও আবেদন করতে পারবেন।

অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হতে মাত্র একদিন সময় লাগবে। একবার সম্পূর্ণ হলে, নিয়োগকর্তারা তাদের বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ফরেন ওয়ার্কার্স মেডিক্যাল এক্সামিনেশন মনিটরিং এজেন্সির (ফমিমা) মাধ্যমে নিতে হবে যাতে তারা সুস্থ এবং তাদের নিজ নিজ সেক্টরে কাজ করতে সক্ষম হয়। পরবর্তী প্রক্রিয়াটি হবে পুনর্নির্মাণ ফি, ভিসা, অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস (পিএলকেস), প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং শুল্ক প্রদান। যখন সমস্ত নথি সম্পূর্ণ হয় নিয়োগকর্তারা পিএলকেস মুদ্রণ করতে পারবেন।

প্রথম দিনে কতজন নিয়োগকর্তা আবেদন করেছেন, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানিয়ে দেয়া হবে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

রিক্যালিব্রেশন ফি, ১ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত, উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তা প্রহরী এবং পরিষেবা খাতে ১ হাজার ৮৫০ রিঙ্গিত, বৃক্ষরোপণ সেক্টর এবং কৃষি খাতে ৬৪০ রিঙ্গিত, পিএলকেস ৬০ রিঙ্গিত, প্রসেস ১২৫ রিঙ্গিত। এছাড়া মেডিকেল ও অন্যান্য খরচসহ মোট সরকারি খরচ ৫ হাজার ৩৩৫ রিঙ্গিত।

যে আটটি খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তা রক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান এবং বিদেশি গৃহকর্মী।

এ সকল সেক্টরে বৈধতার ক্ষেত্রে কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইমিগ্রেশন কখনোই কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে এজেন্ট বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেনি। আরটিকে, যা প্রাথমিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছিল, সেটি আবারও চলবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর আগের রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের অধীনে মালয়েশিয়ায় চার লাখ ১৮ হাজার ৬৪৯ জন বিদেশি কর্মী কাজের জন্য নিবন্ধিত হয়েছিলেন। এই নিবন্ধনের মেয়াদ গত বছরের (২০২২ সাল) ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ইমিগ্রেশন বিভাগ ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭৭ জন বিদেশি কর্মীকে অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস দিয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের ৪ লাখ ৪৬ হাজার ২২৯ জন, ইন্দোনেশিয়ার ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৭ জন, নেপালের ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৮ জন, মিয়ানমারের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯০ জন এবং ভারতের ৮১ হাজার ২ জন।

বর্তমানে কতজন বাংলাদেশি দেশটিতে অনথিভুক্ত রয়েছেন, তার নির্দিষ্ট কোনো হিসেব নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখেরও বেশি অনথিভুক্ত বাংলাদেশি রয়েছেন। গত ২৫ জানুয়ারি দেশটির রাজধানী পুত্রজায়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার অনথিভুক্ত বাংলাদেশিদের রিক্যালিব্রেশনের আওতায় সহজ প্রক্রিয়ায় বৈধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রাখেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply