মা-বাবা আলাদা হয়ে গেলে তাদের সন্তানরা শারীরিকভাবে বড় হলেও মানসিকভাবে বড় হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। বলেছেন, দম্পতিরা নিজেদের বিরুদ্ধে মামলা করলে সংসার করা যায় না। এছাড়া, নারীদের শাশুড়িকে নিয়েই সংসার করতে হয় বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক মামলার শুনানিতে এসব মন্তব্য করেন।
নওগাঁয় বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া মো. সাজ্জাদুর রহমান ও তৌহিদা আক্তারের ৮ বছরের সন্তান সাজফা সাজিদাকে হেফাজতে রাখা নিয়ে এ মামলা করা হয়।
আদালতে তৌহিদার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত ও সাজ্জাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এএসএম শাহরিয়ার কবির।
অমিত দাসগুপ্ত বলেন, আদালত শিশুটির বাবা ও মাকে পারস্পরিক বোঝাপড়া করতে সময় দিয়েছেন। এ মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য ৫ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে নওগাঁর সদর উপজেলার কুসুমদি গ্রামের তৌহিদা আক্তারকে একই উপজেলার বাংগাবাড়িয়া গ্রামের মো. সাজ্জাদুর রহমান বিয়ে করেন। পরের বছর জন্ম নেয় কন্যাসন্তান সাজফা সাজিদা।
সংসারে টানাপড়েনের একপর্যায়ে গত বছর তৌহিদাকে তালাক দেন সাজ্জাদুর। এ ঘটনায় সাজ্জাদুরের বিরুদ্ধে যৌতুক চাওয়ার অভিযোগে নওগাঁ থানায় গত বছর ২০ জানুয়ারি মামলা করেন তৌহিদা। মেয়েকে নিজের কাছে নিতে ২৬ মে হাইকোর্টে রিট করেন সাজ্জাদুর।
এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট ৩০ মে এক আদেশে শিশু সাজিদাকে আদালতে হাজির করতে মা ও নওগাঁ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এই আদেশ পেয়ে নওগাঁ থানার পুলিশ ২৫ জুন শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নেয়। এর পর ২৭ জুন সাজিদাকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে, হাইকোর্টের আদেশের খবর পাওয়ার পর আইনি সহায়তা চেয়ে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটিতে আবেদন করেন তৌহিদা। আবেদনটি পেয়ে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি অনুসন্ধান শেষে তাকে আইনি সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মামলা পরিচালনার জন্য লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট অমিত দাসগুপ্তকে নিযুক্ত করা হয়।
২৭ জুন আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর আদালত তৌহিদা ও সাজ্জাদুরের বক্তব্য শোনেন। এ সময় তৌহিদা আদালতকে বলেন, তিনি এখনও সাজ্জাদুরের সঙ্গে সংসার করতে রাজি আছেন। কিন্তু সাজ্জাদুর আবার আগের মতো সংসার করার পক্ষে কোনো মত দেননি।
এর পর আদালত সাজিদাকে আপাতত মায়ের হেফাজতে রাখার ও সপ্তাহে অন্তত একদিন বাবা তাকে দেখতে পারবেন বলে আদেশ দেন।
এ ছাড়া সাজ্জাদুর ও তৌহিদার একসঙ্গে আবার সংসার করা যায় কিনা বা কোনো সমঝোতা করা যায় কিনা সে বিষয়ে উভয় পক্ষকে উদ্যোগী হতে বলে আদালত ২৪ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
অমিত দাসগুপ্ত বলেন, আদালতের ওই আদেশের পর সাজিদার সঙ্গে তার বাবা দুবার দেখা করেছেন। শিশুটির সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে। এখন বাবা শিশুর ভরণপোষণের জন্য ৫ হাজার টাকা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।
আজ আদালতে এ কথা জানানোর পর আদালত বাবা-মায়ের পারস্পরিক বোঝাপড়ার জন্য আরও সময় দিয়ে ৫ আগস্ট আদেশের দিন রেখেছেন।
আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত জানান, বিচ্ছেদের পর শিশুটির মা তার বাবার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেন। এ বিষয়ে আদালত বলেন, মামলা করে সংসার করা যায় না।
এছাড়া আদালতে শিশুটির বাবা সাজ্জাদুর বলেন, সে (সাজিদার মা) আমার মায়ের সঙ্গে থাকতে চায় না। তখন আদালত বলেন- শাশুড়ি হচ্ছে মায়ের মতো। তাকে নিয়েই তো সংসার করতে হয়।
যমুনা অনলাইন: এটি
Leave a reply