আদানি গ্রুপের জালিয়াতি নিয়ে দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল ছিল ভারতের পার্লামেন্ট। বিরোধী দলগুলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির যোগসূত্র নিয়ে চাপ সৃষ্টি করলে যুগ্ম সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবিতে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) কয়েক মিনিটের মধ্যেই সংসদের উভয় কক্ষই মুলতবি ঘোষণা করা হয়। কয়েক লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর ক্ষতিকে প্রকাশ্যে আনতে আগামী সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা করছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। ইকোনমিক টাইমস ইন্ডিয়া’র খবর।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেনুগোপাল একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার দফতরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুদের সুবিধা করে দিতে সরকার সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থকে বিপন্ন করতে পারে না।
বৃহস্পতিবারও (২ ফেব্রুয়ারি) আদানি গ্রুপের জালিয়াতি নিয়ে যুগ্ম সংসদীয় কমিটির তদন্ত চেয়েছে বিরোধী ৯টি রাজনৈতিক দল। তাদের অভিযোগ, কোটি কোটি ভারতীয়র সঞ্চয় নিয়ে ছেলেখেলা করছে শিল্পগোষ্ঠীটি। অবশ্য, সরকার এবং শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’ কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে বিষয়টি। তবে, বিনিয়োগকারীদের ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন খোদ গৌতম আদানি।
ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের অধিবেশনই বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ‘আদানি গ্রুপের’ কারচুপি-জালিয়াতি নিয়ে ছিল উত্তাল। স্পিকার এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করলে ওয়াক আউট করেন বিরোধীরা। তারা দাবি জানান, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পার্লামেন্ট কর্তৃক গঠিত যুগ্ম তদন্ত কমিটি। অথবা, সুপ্রিম কোর্টের গঠিত তদন্ত কমিটির দাবিও জানান তারা।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্টভাবে জালিয়াতি করছে আদানি গ্রুপ। পার্লামেন্টে আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করেছেন স্পিকার। কিন্তু, কোটি-কোটি ভারতীয়র সঞ্চয় নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারেন না গৌতম আদানি। রেকর্ড দরপতনে রাতারাতি দেউলিয়া হয়েছে বহু প্রতিষ্ঠান। আমাদের দাবি, বিষয়গুলোর সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। খতিয়ে দেখা হোক, সরকারের সাথে গৌতম আদানির সম্পর্কও।
শেয়ারবাজারে ভরাডুবির পর বিরোধীদের তদন্তের তোপে আদানি গ্রুপ এখন দ্বিমুখী সংকটে। এ অবস্থায় প্রথমবারের মতো দরপতন, এফপিও প্রত্যাহার এবং শিল্পগোষ্ঠীর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন গৌতম আদানি। আদানি শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা বলেন, এফপিও প্রত্যাহার করায় অনেকে বিস্মিত। তবে, বাজারের টালমাটাল অবস্থা দেখেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এটি বিদ্যমান কার্যক্রমের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। বরং, সময় মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন গুরুত্ব পাবে। আমার কাছে বিনিয়োগকারীরাই পাবেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কঠিন এ সময়ে আমাদের ওপর ভরসা রাখায় কৃতজ্ঞ।
ভারত সরকারও আদানি ইস্যুতে প্রশ্নবাণে জর্জরিত। বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানায়, বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ারের দরপতন দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, অন্যান্য কোনো দেশ আদানি গ্রুপ সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কিনা, সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে না। এর উত্তর সংশ্লিষ্ট দফতর দিতে পারে। প্রতিবেশী কোনো দেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইস্যুতেও ধারণা অস্পষ্ট। জানা মতে, এটি সার্বভৌম সরকারের সাথে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের শীর্ষ শিল্পপতিকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ। তাদের তথ্য মতে, স্বল্প সময়ে গুজরাটি এই ব্যবসায়ীর উত্থানের পেছনে রয়েছে জালিয়াতি এবং শেয়ার বাজারে কারচুপি। এই তথ্যকে অস্বীকার করে ৪১২ পৃষ্ঠার জবাব দেয় আদানি গ্রুপ।
আরও পড়ুন: শীর্ষ ২০ ধনীর তালিকা থেকেও ছিটকে গেলেন আদানি
/এম ই
Leave a reply