আসলেই কি গোয়েন্দা তৎপরতার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় নজরদারি বেলুন পাঠিয়েছে চীন? নাকি, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল তাদের? অনিচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ঢুকে পড়েছে বেলুন; বেইজিংয়ের এমন সরল দাবি মানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র। বেলুন নিয়ে প্রশ্ন আছে বিশ্লেষকদের মনেও। অনেকেই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যই কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। দ্য টেলিগ্রাফের খবর।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় প্রবেশের এক সপ্তাহের মাথায় ধ্বংস করা হয়েছে চীনের নজরদারি বেলুন। এফ টোয়েন্টি টু ফাইটার জেট থেকে ছোঁড়া এআইএম-নাইন এক্স সাইড উইন্ডার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বেলুনটি পড়েছে সাগরে।
জননিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যই বেলুন ধ্বংসে সময় নেয়া হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, বেলুন সম্পর্কে জানার পর বুধবারই (১ ফেব্রুয়ারি) নির্দেশ দেই, যত দ্রুত সম্ভব এটি ধ্বংস করা হোক। পেন্টাগন পরামর্শ দেয়, কারও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া কাজটি সম্পন্ন করতে হলে সবচেয়ে ভালো উপায় হবে এটিকে সাগরে ফেলা। তারা সফলভাবে কাজটি করেছে। আমাদের বৈমানিকদের সাধুবাদ জানাই।
চালকবিহীন আকাশযান ধ্বংসে প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন। দেশটির আবারও দাবি করেছে, দুর্ঘটনাক্রমে নির্ধারিত পথ থেকে সরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে প্রবেশ করেছিল ওই বেলুন। গোয়েন্দাগিরির উদ্দেশ্যে নয়, বরং সাধারণ একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী বেলুন হিসেবেই সেটিকে আখ্যা দেয়া হয়। চীনের দাবি, চীন এবং উত্তর আমেরিকার মাঝে নর্থ প্যাসিফিকে যে বাতাস বয়ে থাকে, সেই ওয়েস্টারলিস বাতাস বেলুনটিকে তার নির্দিষ্ট পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে।
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যাত্রীবাহী বিমান ৪০ হাজার ফুটের উপর দিয়ে খুব বেশি চলাচল করে না। ফাইটার প্লেনগুলোর উচ্চতা সাধারণত সর্বোচ্চ হয়ে থাকে ৬৫ হাজার ফুট। ইউ-টু’র মতো স্পাই প্লেন উড়তে পারে ৮০ হাজার ফুট উঁচু দিয়েও। আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরিত স্পাই বেলুন উড়তে পারে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ফুট উচ্চতার মধ্যে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, স্যাটেলাইটের চেয়ে এ ধরনের বেলুনের কার্যকারিতা কিছুটা ভিন্ন। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নজরদারি করার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের চেয়ে বেলুন থেকে অপেক্ষাকৃত কাছের ছবি পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়া, লক্ষ্যবস্তুকে বেশি সময় ধরে নজরদারিতেও রাখা সম্ভব হয় বেলুন ব্যবহার করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাতাসের গতিবেগের কারণে বেলুনটির আলাস্কা-কানাডা হয়ে মন্টানায় পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব নয়। তবে, এতদিন ধরে উড়তে থাকা অস্বাভাবিক। অনেকে মনে করছেন, ভূমি থেকে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকতে পারে এটি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের পরিকল্পিত সফরের আগে সক্ষমতার বার্তা দিতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বেইজিং, ধারণা অনেকের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্যাট্রিক ক্রোনিন বলেন, চীন হয়তো নিশ্চিত হতেই চেয়েছে, বেলুনটা শনাক্ত হোক। নিজেদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দেখাতে চেয়েছে তারা। একইসাথে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াও দেখতে চেয়েছে। আর সেটাই সম্ভবত বেইজিংয়ের বড় অর্জন। এর আগে তাইওয়ানে, বা জাপান ও কোরিয়ার কাছাকাছি এভাবে কৌশলগত উদ্দেশ্যে বেলুন পাঠিয়েছে তারা।
হাওয়াইয়ের প্যাসিফিক ফোরাম থিঙ্ক ট্যাঙ্কের বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিলের মতে, বেলুনটির গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা ছিল সীমিত ছিল। এটা ইঙ্গিত করে যে, এর আসল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। তিনি বলেন, চীনের নিজস্ব গুপ্তচর এবং সামরিক স্যাটেলাইট রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নজরদারি করার ক্ষেত্রে সেসবই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর। তাই, এটা ভেবে নেয়া অতিরঞ্জন হবে না যে, চীনা গোয়েন্দারা এই বেলুন পাঠিয়ে খুব বেশি লাভবান হতে পারেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্যাটেলাইট বা ড্রোনের তুলনায় বেলুনের বাড়তি কিছু সুবিধা আছে। সাধারণ হিলিয়াম গ্যাসধারী তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল বেলুনগুলো আকাশের অনেক উঁচুতে উড়তে সক্ষম। নিচের অংশে থাকে একটি সৌরশক্তির প্যানেল। থাকে ক্যামেরা, রাডার, সেন্সর এবং যোগাযোগের সরঞ্জাম। স্যাটেলাইট কেবল নিজের কক্ষপথেই ঘুরতে পারে। অন্যদিকে বেলুন পাঠানো যায় যেকোনো জায়গায়। আবার ড্রোনের চেয়ে ধীরগতির বলে লক্ষ্যবস্তুতে খুব ভালো করে নজরদারিও করতে পারে।
আরও পড়ুন: অবশেষে চীনা স্পাই বেলুন ধ্বংস করলো যুক্তরাষ্ট্র
/এম ই
Leave a reply