রাষ্ট্রপতি পদে আবদুল হামিদের উত্তরসূরী হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের নাম ঘোষণা

|

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে নতুন রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এই ঘোষণায় সাবেক ছাত্রনেতা থেকে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান হতে হতে চলছেন পাবনার সন্তান মো. সাহাবুদ্দিন।

ব্রিফিংয়ে সিইসি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একজন প্রার্থী থাকায় মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন রাষ্ট্রপতির নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

এর আগে, সিইসির নেতৃত্বে এদিন নির্বাচন কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতিপদে মনোনয়ন পত্র বাছাই করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির একটি প্রতিনিধি দল।

বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে নব রাষ্ট্রপ্রধান মো. সাহাবুদ্দিন

আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। ওইদিনই মো. সাহাবুদ্দিনের কাধে বর্তাবে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব।

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়। রাষ্ট্রপতি পদে মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে গতকাল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে তার নাম দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। শরফুদ্দিন আনছারী ও খায়রুন্নেসা তার বাবা-মা।

১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। আর ১৯৬৮ সালে পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিএসসি পাস করেন ১৯৭১ সালে (১৯৭২ সালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়)। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছর ১৯৭৫ সালে পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. সাহাবুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী তিনি।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ২০ আগস্ট সামরিক আইনের সাত ধারায় আটক হয়েছিলেন তিনি। আর তখন প্রায় তিন বছর কারারুদ্ধ ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন।

কারাভোগের পর মুক্ত হয়ে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আইন পেশায়ও যোগ দেন। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারাঙ্গনে বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন মো. সাহাবুদ্দিন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। সে সময় হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন নব রাষ্ট্রপ্রধান।

২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্য বলে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান। যা কানাডা কোর্টের সমর্থন পায়।

দুদকের দায়িত্ব পালন শেষে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পান দলটির দুঃসময়ের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত এ নেতা। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও হয়েছেন হন। পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনেরও সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন মো. সাহাবুদ্দিন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি মেয়াদ শেষে যেসব সরকারি সুবিধা পান

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply