শ্বাসরুদ্ধকর কোয়ালিফায়ার টু’তে রংপুর রাইডার্সকে ১৯ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পৌঁছেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ১৮৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১৬৩ রান সংগ্রহ করে বিপিএলের নবম আসর থেকে বিদায় নিলো রংপুর রাইডার্স।
শুরুতেই স্যাম বিলিংসের উইকেট হারায় রংপুর। মাত্র ১ রান করে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরে যান তিনি। শামিম হোসাইন এসেও লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। ১১ রানে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। পরে নিকোলাস পুরান আর রনি তালুকদার লড়াই চালিয়ে যান। ১৪ বলে ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি। দলীয় রান তখন ৬৮।
৪র্থ উইকেট জুটিতে রংপুরকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন রনি তালুকদার আর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ৫২ বলে ৮২ রানের জুটি গড়ে ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে যায় তারা।
কিন্তু ১৮ ও ১৯তম ওভারে পাল্টে যায় ম্যাচের ভাগ্য। তানজিম সাকিবের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে থিসারা পেরেরার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৪ বলে ৩৩ রান করা সোহান। একই ওভারে ফর্মের তুঙ্গে থাকা রনি তালুকদার খাম খেয়ালিপনায় রানআউট হলে কপাল পোড়ে রংপুরের। তানজিম সাকিবের বল মিস করে সামনে এগিয়ে গেলে সেই সুযোগ কাজে লাগান বদলি উইকেটরক্ষক জাকির হাসান। তার করা থ্রো সরাসরি স্ট্যাম্পে আঘাত করলে ৫২ বলে ৬৬ রান করে বিদায় নেন রনি তালুকদার। পাশাপাশি তৌহিদ হৃদয়কে পেছনে ফেলে আসরের ২য় সর্বোচ্চ ৪২৫ রানের মালিক এখন তিনি।
১৯তম ওভারটিও ভয়াবহ ছিল রংপুরের জন্য। লুক উডের করা সেই ওভারেও দুই উইকেট হারায় রাইডার্স। প্রথমে মেহেদী হাসান আর পরের বলে ব্রাভো আউট হলে জয়ের সুবাস পেতে থাকে সিলেট।
৩ ওভারে যেখানে দরকার ছিলো ৩৩ রান, সেখানে শেষ ওভারে রংপুর রাইডার্সের সামনে লক্ষ্য ২৮ রানের। দুই ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৫ রান নেয়া পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। শেষ পর্যন্ত দাসুন শানাকা ৮ রানের বেশি যোগ করতে না পারায় ১৯ রানের হার নিয়ে বিদায় নিতে হয় রংপুর রাইডার্সকে। বিপরীতে প্রথমবারের মত ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্স।
এর আগে, কোয়ালিফায়ার টু’তে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ১৮২ রান করে সিলেট স্ট্রাইকার্স। নাজমুল শান্ত আর তৌহিদ হৃদয়ের ভালো শুরুর পরও মাঝে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হারানো সিলেটকে লড়াই করার মতো সংগ্রহ এনে দেন জর্জ লিন্ডে আর থিসারা পেরেরা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় সিলেট। গ্রুপ পর্বের দুই দেখার দু’টিতেই সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারিয়েছিল রংপুর রাইডার্স। এদিন অবশ্য দুই ওপেনার নাজমুল শান্ত আর তৌহিদ হৃদয় নিজেদের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং চালিয়ে যায় শুরু থেকেই। প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ৪৪ রান তুলে বড় সংগ্রহের আভাস দেন এই দুই ব্যাটার। এরই মধ্যে চলতি আসরে চারশত রানের মালিক হয়েছেন এই দুই ব্যাটার।
৫৩ বলে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মেহেদীর বলে শান্ত লেগ বিফোরে কাটা পড়লে। ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় রংপুর রাইডার্স। যেখানে থার্ড আম্পায়ার ব্যাটসম্যান সামনে এগিয়ে আসার কারণেও আউট দেন। যা নিয়ে মাঠেই কিছুটা ক্ষোভ দেখান শান্ত। সাঝঘরে ফেরার আগে ৩০ বলে ৪০ রান করেন এই ব্যাটার। যেখানে ছিল ১টি ছয় আর ৫টি চারের মার।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইনফর্ম ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়ও। ২৫ বলে ২৫ রান করে হাসান মাহমুদের বলে ব্রাভোর হাতে ধরা পড়েন তিনি। অবশ্য অপরপ্রান্তে প্রানবন্ত শুরু করেন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
দলীয় ১০১ রানে ব্রাভোর বলে জাকির হোসেন আউট হলে ৩য় উইকেটের পতন হয় সিলেট স্ট্রাইকার্সের। এরপর মাশরাফীর সাথে জুটি গড়েন রায়ান বার্ল। জিম্বাবুইয়ান এই ব্যাটার ৬ বলে ১৫ করলে রানের চাকা সচল থাকে সিলেটের। তবে বার্ল আর মাশরাফী মাত্র দুই রানের ব্যবধানে আউট হলে আবারও খেই হারায় স্ট্রাইকার্স। ১৬ বলে ২৮ রান করা মাশরাফীর ব্যাটে ছিল ১টি ছয় আর ৩টি চারের মার।
দলের আরেক তারকা মুশফিক শুরু করার আগেই শেষ হয়ে যান। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ বলে ৬ রান। সিলেটের রান তখন ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান। তবে সিলেটকে ভালো সংগ্রহ এনে দেন দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটার থিসারা পেরেরা আর জর্জ লিন্ডে। ইনিংসের ২য় সর্বোচ্চ ৩৬ রানের জুটি আসে ৭ম উইকেটে। মাত্র ২১ বলে এই রান তুলে দলের সংগ্রহ সম্মানজনক স্থানে নিয়ে যান তারা।
ইনিংসের এক বল আগে রান আউট হওয়া থিসারা করেন ১৫ বলে ২১ রান। তবে জর্জ লিন্ডে ছিলেন আরও ভয়ঙ্কর। ১০ বলে অপরাজিত ২১ রান করা এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার হাঁকিয়েছেন দু’টি ছক্কা আর একটি চার। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ১৮২ রানে থামে সিলেটের ইনিংস। রংপুর রাইডার্সের হয়ে হাসান মাহমুদ আর দাসুন শানাকা নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মেহেদী আর ব্রাভো।
/এনএএস
Leave a reply