রুশ-ইউক্রেনের যুদ্ধ যেখানে বিভক্ত করেছে গোটা বিশ্বকে সেখানে ব্যতিক্রম এক প্রেমিক যুগল। শত্রু দেশের নাগরিক হলেও সংসার পেতেছেন রুশ যুবক ও ইউক্রেনীয় যুবতী। মিসাইল-বোমার বদলে বিশ্বকে দিয়েছেন ভালোবাসার বার্তা। অবশ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের মিলনেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। অবশেষে, সার্বিয়াতে গিয়ে এক হয়েছেন এ যুগল। সেখানেই বেঁধেছেন ঘর। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
ভালোবাসা মানে না কোনো বাধা- বহুল প্রচলিত এ কথারই যেনো উদাহরণ এই যুগল। একজনের বাড়ি রাশিয়ায় আর অন্যজন ইউক্রেনের নাগরিক। প্রতিবেশি দুই দেশ এখন পরস্পরের চরমতম শত্রু। তবে, দেশের এ বৈরি সম্পর্ক তাদের এক হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি; বাড়িয়েছে শুধু অপেক্ষাই।
২৩ বছর বয়সী কুরচকিনের দেশ রাশিয়া আর তার সমবয়সী মারিয়ার বাড়ি ইউক্রেনে। একটি অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে পরিচয় তাদের, পরে তা রূপ নেয় প্রণয়ে। সিদ্ধান্ত নেন বাকিটা জীবন একসাথে কাটানোর। কিন্তু, এরপরই শুরু হয় যুদ্ধ, অনিশ্চয়তায় পড়ে তাদের একসাথে থাকার স্বপ্ন। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে মারিয়া পাড়ি জমান চেক প্রজাতন্ত্রে। কিন্তু রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায়, দেশটিতে যাওয়ার উপায় ছিলো না কুরচকিনের।
ইউরি কুরচকিন বলেন, এক বছর আগেই আমরা একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গত বছরের জানুয়ারিতে আমি আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট তৈরি করি আর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলো যুদ্ধ। তাতেই ভেস্তে গেলো আমাদের সব পরিকল্পনা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মারিয়া চেক রিপাবলিকে আশ্রয় নেয়। পরে আমরা এমন একটা জায়গা খুঁজতে শুরু করি যেখানে দুজন একসাথে থাকতে পারবো।
এখন ভিসা ছাড়াই সার্বিয়ায় প্রবেশ করতে পারেন রুশ নাগরিকরা, ইউক্রেনীয়দের প্রবেশেও দেশটিতে নেই কোনো বাধা। তাই, তারা সিদ্ধান্ত নেন সার্বিয়া যাওয়ার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে প্রথমবারের মতো তাদের দেখা, সেখানেই এখন সংসার পেতেছেন এ যুগল।
মারিয়া ভেহিভস্কা বলেন, সার্বিয়ায় পৌঁছাতে টানা ১৬ জার্নি ভ্রমণ করতে হয়েছে আমাকে। পুরো সময়টাতে একমুহূর্তের জন্যও ঘুমাতে পারিনি। এ আনন্দময় অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বাস থেকে একরকম ঝাপ দিয়েই তাকে আমি জড়িয়ে ধরি।
সার্বিয়াতে গিয়েও অবশ্য তাদের বিপদ কাটেনি। উগ্র রুশপন্থীরা তাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। যুদ্ধের সমর্থনে তাদের ঘরের সামনে এঁকে দিয়েছে বিশাল আকৃতির এক জেড সাইন।
/এসএইচ
Leave a reply