‘সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে’

|

প্রতীকী ছবি।

আলমগীর হোসেন:

মালয়েশিয়ায় যেতে একজন কর্মীর ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ টাকার বেশি। অথচ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা ছিল, ৮০ হাজার টাকারও কমে যাওয়া যাবে দেশটিতে। মূলত, ভিসা বাণিজ্যের কারণে ব্যয় বাড়ছে। এটি বন্ধ না হলে ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যদিও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন অনেকে।

ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্মী প্রেরণে গতি আনার বিষয়ে সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল বলেন, প্রথমত, বায়রা যে ভিসা ট্রেডিং করছে, সরকার কোন জাদুর কাঠিতে তা বন্ধ করবে? দ্বিতীয়ত, মালয়েশিয়ার স্থানীয় লোক কিংবা সেখানকার এজেন্সি তো সরাসরি ভিসা ট্রেডিংয়ে জড়িত। এ দুই জায়গায় দেশ দুটির সরকার কীভাবে ভিসা ট্রেডিং বন্ধ করবে? ভিসা ট্রেডিং বন্ধ করা ছাড়া অভিবাসন ব্যয় কমানো সম্ভব না।

আর বায়রার যুগ্ম মহাসচিব এম টিপু সুলতান বলেন, ৫০ শতাংশ রেট বৃদ্ধির কারণেই সিন্ডিকেট। আগে ২৫টা এজেন্সিও সিন্ডিকেটকে যে টাকা দিতো, এখন ১০০টা এজেন্সিও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিচ্ছে তাদেরকে। ভিসা ট্রেডিং নিসন্দেহে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সিন্ডিকেটও ভেঙে দিতে হবে, যদি কম খরচে কর্মী প্রেরণ করতে হয়।

সীমিত সংখ্যাক এজেন্সির পরিবর্তে সবার জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবি জনশক্তি রফতানিকারকদের। তবে এটি করার আগে নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ঠিক করার পরামর্শ। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকেরই।

কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল বলেন, দেখবো, সরকার চুক্তির কোন কোন জায়গাতে সংশোধন করতে পারে। একটা এজেন্সির মালিক হিসেবে আমি বলবো, দেশটির শ্রমবাজার সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলে ভালো। তবে, আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের কোন নীতি আছে তা-ও দেখতে হবে। আমাদেরকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে দুই যুগের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাবে।

এম টিপু সুলতান বলেন, আমরা কখনও চাই না এই মার্কেট বন্ধ হোক। এখন ১০০টি এজেন্সি লোক পাঠাতে পারছে। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত হোক। যেটা নেপালে আছে, এছাড়া আরও ১৪টি দেশে রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেট নির্ভর। যে কারণে এখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। তবে সরকার আন্তরিক হলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্ট্যাডিজের সমন্বয়ক ড. জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, একটা মানুষ পাঠাতে পারলে এক লাখ টাকার মতো লাভ করা যায়। এতো সস্তা ব্যবসা বোধয় অন্য কোথাও নেই। তাই এখানে অদৃশ্য-দৃশ্যমান ব্যক্তি জড়িত। তাই আমার মনে হয়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ক্ষেত্রে সুশাসন তৈরি করা খুব কঠিন।

এদিকে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধিতে বিমান ভাড়া ও টাকার অবমূল্যায়নও ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply