পপগুরুর জন্মদিন আজ

|

মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান একেএ আজম খান (১৯৫০-২০১১)।

তার হাত ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলা গানের নতুন এক ধারার। ব্যান্ড সঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি তুলেছিলেন তুমুল আলোড়ন। বাংলাদেশের সঙ্গীতের ইতিহাসে পপসঙ্গীতের পথিকৃৎ তিনি। বেঁচে থাকলে আজ ৭৩তম জন্মদিন পালন করতেন প্রয়াত এ কিংবদন্তি ‘পপগুরু’ আজম খান।

‘আলাল ও দুলাল’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’- গানগুলোর কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের ‘গুরু’ আজম খানের কথা। ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার আজিমপুর কলোনিতে জন্ম জনপ্রিয় এ সংগীত শিল্পীর। শৈশবের অধিকাংশ সময় তার কেটেছে সেখানেই।

তরুণ আজম খান।

শুধু পপশিল্পী হিসেবেই নয়, স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন আজম খান। মাত্র ২১ বছর বয়সে ঢাকা উত্তরের সেকশন কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এরপর দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলে গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭২ সালে লাকী আখন্দ ও হ্যাপি আখন্দ- দুই ভাইকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘উচ্চারণ’ নামের গানের দল। এরমধ্য দিয়েই পপসংগীতের জগতে যাত্রা শুরু হয় আজম খানের।

উচ্চারণ ব্যান্ডের সদস্যদের সাথে আজম খান।

সে বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’- গান দুটি তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। এরপর ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘হারিয়ে গেছে খুঁজে পাবো না’- গানগুলো গেয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন তিনি।

তার অন্যান্য জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘আমি যারে চাইরে’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘অভিমানী’, ‘অনামিকা’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’ ইত্যাদি।

বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও ব্যক্তিজীবনে শিল্পী আজম খান কতোটা সহজ-সরল ছিলেন; সে প্রমাণ সহশিল্পী বা সংগীতজগতের মানুষেরা অসংখ্যবার পেয়েছেন। গান ছাড়াও জনপ্রিয় এ সংগীত শিল্পী খেলাধুলায়ও ছিলেন বেশ মনযোগী। ক্রিকেটার হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিলেন। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন।

সংগীতের পাশাপাশি মিডিয়ার অন্যান্য ক্ষেত্রেও পপগুরু আজম খান কাজ করেছেন। নাটক, চলচ্চিত্র ও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন তিনি। তবে বাংলা সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আজম খানকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

ক্যানসারের সঙ্গে এক বছরেরও বেশি সময় লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলাদেশের পপ সম্রাট। জীবন যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিলেও, যাওয়ার আগে দুটি জিনিস রেখে গেছেন-স্বাধীন দেশ-মানচিত্র আর অন্যটি হলো বাংলা রক গান। আজম খান চলে গেছেন ঠিকই, কিন্তু রয়ে গেছেন আরও বেশি গভীরভাবে। বাংলা গানের হৃদপিণ্ডে তার নামটি চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সবার হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন প্রিয় ‘পপগুরু’ হিসেবে।

/এসএইচ



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply