সিনেমা তৈরির সময় তারকাদের প্রায়ই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, যেখানে তাদেরকে অভিনয় করতে হয় তাদের ‘কমফোর্ট জোন’ এর বাইরে গিয়ে। কখনও ‘বডি ডাবল’ এর ব্যবহার, কখনও বা দর্শকের চোখকে ফাঁকি দিতে নকল জিনিসের ব্যবহার কিংবা থাকে ক্যামেরার কোনো কারসাজি। কিন্তু, এমন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই আছেন, যারা নিজেদের চরিত্র থেকে শুরু করে সিনেমার দৃশ্য জীবন্ত করে তুলতে ঘটিয়েছেন বহু অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা।
ক্রিশ্চিয়ান বেল; যার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘ব্যাটম্যান’ কিংবা ‘আমেরিকান সাইকো’র দৃশ্য। ২০০৪ সালে ‘দ্য মেশিনিস্ট’ নামে থ্রিলার জনরার একটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। জানা যায়, এ সিনেমায় নিজের চরিত্র ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে ২৭ কেজির মতো ওজন কমিয়েছিলেন বেল!
এ প্রসঙ্গে হলিউড অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান বেল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমি তখন অদ্ভুত এক সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। দিনে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমাতাম। বাকি সময় জেগে গল্পের বই পড়তাম। এমনও দিন গিয়েছে, যেদিন একটানা দশ ঘণ্টা শুধু বই পড়েছি। কিছু জিনিস আসলে প্রস্থেটিকে সম্ভব নয়। নিজের মাঝে ধারণ করতে হয়। আমি অভিনেতা, অভিনয়ের জন্য সবকিছু করতে পারি।
২০১৪ সালে ‘ফিউরি’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শিয়া লাবিউফ। নিজের চরিত্রকে আরও জীবন্ত করে তুলতে মেকআপের শুধু ওপর ভরসা রাখেননি তিনি। চরিত্রের প্রয়োজনে শিয়ার গালে একটি কাটা দাগের প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি নিজের গালে নিজেই একটি ক্ষত সৃষ্টি করেন। এমনকি ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁতও তুলে ফেলেছিলেন শিয়া।
নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য যেকোনো সীমা অতিক্রম করতেন অভিনেতা নিকোলাস কেজও। ‘ভ্যাম্পায়ার’স কিস’ এ তার চরিত্রটি ছিল, এমন এক ব্যক্তির যে মনে করে যে সে ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছে। এমন চরিত্রের সাথেপ মানিয়ে নিতে পরিচালক নিকোলাসকে বলেছিলেন কাঁচা ডিম খেতে। কিন্তু, নিকোলাস তেলাপোকা পর্যন্ত খেয়েছিলেন। এমনকি তার আঙুলে গরম ইয়োগার্ট ঢেলে দিতে বলেন, যাতে সঠিক এক্সপ্রেশন আসে!
‘দ্য ডার্ক নাইট’ সিনেমায় জোকার চরিত্রে অভিনয় করে হিথ লেজার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এ চরিত্রটি তার জন্যই তৈরি! তবে তার এমন অনবদ্য অভিনয়ের নেপথ্যে আছে অন্য গল্প। কিলারের মানসিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য নিজেকে কয়েকমাস ঘরবন্দি করে ফেলেন হিথ। সিরিয়াল কিলিংয়ের ওপর লেখা প্রায় সব বই পড়ে ফেলেছিলেন এ সময়টায়। এভাবেই নাকি জোকারের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পেরেছিলেন তিনি।
‘মিলিয়ন ডলার বেবি’, ‘দ্য নেক্সট ক্যারাটে কিড’, ‘কনভিকশন’-এর মতো বহু জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন হিলারি সোয়াঙ্ক। ‘বয়েজ ডোন্ট ক্রাই’ সিনেমায় তার চরিত্র ছিল একজন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষের। এ চরিত্রের জন্য তিনি তার স্বামীর জামাকাপড় পরে অডিশন দিতে গিয়েছিলেন। এমনকি পুরুষদের মতো মোটা গলায় কথাও বলছিলেন।
ডিক্যাপ্রিও’র সিনেমা মানেই তা বিশেষ কিছু হতে বাধ্য। চরিত্রের গুরুত্ব মাথায় রেখেই সিনেমা নির্বাচন করেন তিনি। ২০১৫ সালে ‘দ্য রেভন্যান্ট’ সিনেমার জন্য অস্কার জেতেন লিও। জানা যায়, এ সিনেমার শুটিংয়ের সময় বাস্তবেই পশুদের মৃতদেহের উপর ঘুমিয়েছিলেন তিনি। এমনকি খেয়েছিলেন বাইসনের কাঁচা মাংসও!
দ্য রেভন্যান্টের স্মৃতিচারণ করে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হলিউড অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও বলেন, এমন না যে ওটা কোনো ম্যাজিক ছিল। দিনের পর দিন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে যেতে হয়েছে। পুরো টিমকেই অস্বাভাবিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। পর্দায় আমাদের সে যাত্রার কিছু অংশ দেখা গেছে মাত্র। পেছনের গল্প আরও করুণ। তারপরও দিনশেষে আমরা সফল।
সারা বিশ্বেই এমন অনেক নিবেদিতপ্রাণ অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন, যারা চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেদের একেবারে ভিন্নভাবে গড়ে তোলেন; নাওয়া-খাওয়া ভুলে ডুবে যান সেই চরিত্রের মধ্যে। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিবর্তন থেকে শুরু করে মানসিকভাবেও নিজেদের প্রস্তুত করেন চরিত্রের জন্য। সে কারণেই তাদের অভিনয়ে মুগ্ধ হয় দর্শক, অস্কারের মতো পুরস্কার যায় তাদের ঝুলিতে। আর ইতিহাসে তাদের নাম লেখা থাকে স্বর্ণাক্ষরে।
/এসএইচ
Leave a reply