আমিনুল ইসলাম:
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এবারও শেষ হয়নি সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। কাগজে কলমে ৭০ ভাগ কাজ শেষ করার দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে হাওরগুলোর বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বৃষ্টি শুরু হলে আবারও ফসলহানির ঘটনার মুখোমুখি হতে পারেন কয়েক লাখ কৃষক।
গেলো বছর কয়েক দফা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে, কোনোরকমে নতুন ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছে সুনামগঞ্জের কৃষকরা। সোনালি ফলন বাঁচাতে এবারও ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড আর জেলা প্রশাসন।
তবে, ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাঁধের কাজই চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আর অনিয়ম যেন পরিণত হয়েছে নিয়মে। বাঁধের ৫শ’ ফুটের ভেতর থেকে মাটি সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, সেসবের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
জেলার ছোটবড় ৫২টি হাওরের বোরো ফসলকে আগাম বন্যা ও পাহাড়ী ঢল থেকে রক্ষায় ৭৪৮ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় ২০৩ কোটি টাকা। প্রতিবছরের মতো এবারও বরাদ্দের অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। অর্ধেকেরও বেশি কাজ বাকি থাকায় ফসলহানির শঙ্কায় তারা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, যেখানে ৩ ফুট উঁচু বাঁধ করার কথা, সেখানে করা হয় দেড় ফুট। পুরনো মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণে বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা থাকলেও, কোনোমতে কেবল মাটি ফেলে চলে যায় নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দ ২০-৩০ লাখ টাকা হলেও ১০ লাখ টাকার কাজ করেই চলে যায় তারা।
স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত পিআইসি কমিটির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা বলেছেন নানা সংকটের কথা। এর মধ্যে উঠে আসে মাটির সংকটের কথা। কেউই মাটি দিতে চায় না- এমন কথাও জানান তারা।
চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার তাগিদ ছিল। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটিতে তদারক হিসেবে আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার এবং ব্লক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আমরা তদারকির দায়িত্ব দিয়েছি। উনারা সর্বদা এই বাঁধ নির্মাণের তদারকি করছেন।
সম্প্রতি কাজের অগ্রগতি দেখতে বিভিন্ন বাঁধ ঘুরে দেখেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। গাফিলতি ও অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। হাওরের ফসল কৃষকের ঘরে না ওঠা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সব ধরনের ছুটি বাতিলের কথাও জানান মন্ত্রী। এনামুল হক শামীম বলেন, গতবারের চেয়েও এবার বেশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের যেসব সার্ভেয়ার জরিপ করে চলে যায়, সেই ২৬ জনকে আমরা যেতে দেইনি। তারা সুনামগঞ্জে আছে এবং ফসল ওঠা পর্যন্ত থাকবে।
/এম ই
Leave a reply